Powered by Blogger.

Related Post

Translate

Search This Blog

শরিয়তপুর জেলা [Shariatpur disrtict]


শরীয়তপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।

পরিচ্ছেদসমূহ




শরীয়তপুর জেলা
প্রশাসনিক বিভাগঢাকা
আয়তন (বর্গ কিমি)১,১৮১
জনসংখ্যামোট: ১০,৫৭,১৮১
পুরুষ: ৪৯.৫৮%
মহিলা: ৫০.৪২%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা:বিশ্ববিদ্যালয়: ২
কলেজ : ৩৪
মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৮১
মাদ্রাসা : ৬০
শিক্ষার হার৫৫.৪%
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বঅতুল প্রসাদ সেন
প্রধান শস্যধান, পাট, গম
রপ্তানী পণ্যপাট, পিঁয়াজ, রসুন



ভূগোল ও জলবায়ু

শরীয়তপুর জেলার আয়তন ১১৮১ বঃকিলোমিটার এই জেলার উত্তরে মুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা, পুর্বে চাঁদপুর জেলা এবং পশ্চিমে মাদারীপুর জেলা গড় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস গড় বৃষ্টিপাত ২১০৫ মি মি।
ক্রমিক নংবিষয়এককমান
আয়তনবর্গ কি.মি১১৮১
উপজেলাসংখ্যা
থানাসংখ্যা
পৌরসভাসংখ্যা
ইউনিয়নসংখ্যা৬৬
ওয়ার্ডসংখ্যা৪৫
মৌজা/মহল্লাসংখ্যা৬১৬
গ্রামসংখ্যা১২৪৩
সংসদীয় আসনসংখ্যা
১০মোট জনসংখ্যা (২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)লাখ১০·৮
১১জনসংখ্যার ঘনত্বপ্রতি বঃকিঃ৯১৪
১২বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পন্ন ঘর %১০
১৩প্রাথমিক স্কুলসংখ্যা৭৭২
১৪মাধ্যমিক স্কুলসংখ্যা৮৩
১৫মাদ্রাসাসংখ্যা৪২
১৬কলেজসংখ্যা১৬
১৭মাথাপিছু আয়টাকা১২৯৩৬
১৮স্বাক্ষরতার হার (১৫+ বছর) %৪১
১৯হাসপাতালের শয্যাপ্রতি জনসংখ্যা (সরকারী)জন/শজ্জ্যা৪৮৭৫
২০< ৫ বছর শিশু মৃত্যুর হারপ্রতি হাজারে

[সম্পাদনা]প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

শরীয়তপুর জেলা ৭টি উপজেলা, ৫টি মিউনিসিপ্যালিটি, ৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৫টি ওয়ার্ড, ৯৩টি মহল্লা, ১২৩০টি গ্রাম এবং ৬০৭টি মৌজা নিয়ে গঠিত।
এই জেলা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এগুলো হল,

[সম্পাদনা]ইতিহাস

ইতিহাস সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের দক্ষিণাঞ্চল এবং প্রাচীন বরিশালের ইদিলপুর পরগণার কিছু অংশ নিয়ে বর্তমান শরীয়তপুর জেলা গঠিত। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শরীয়তপুরবাসীর ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জেলাটি ফরিদপুরের মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ শরিয়তপুর জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।ধারণা করা হয় ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তুল্লাহ-র নাম অনুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়।
জেলার পটভূমিঃ জেলা হিসেবে ১৯৮৪ সালে আত্মপ্রকাশ করলেও এ অঞ্চলটি সৃষ্টির প্রথম হতেই বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় সকল ব্যাপারেই বিকশিত হতে থাকে। ইতিহাসের আদিকাল হতেই বিভিন্ন সামন্ত প্রভু ও রাজা দ্বারা এ অঞ্চল শাসিত হয়ে এসেছিল। আদিকালে শরীয়তপুরের এ অঞ্চল ‘বংগ’ (Vanga) রাজ্যের অধীনে ছিল। ‘বংগ’ পদ্মা নদীর দক্ষিণে বদ্বীপ অঞ্চলে বিস্তৃত তৎকালীন রাজ্যের নাম। এটি তৎকালীন ভাগীরথী এবং পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত অঞ্চল। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের (৩৮০ খৃঃ - ৪১২ খৃঃ) রাজত্বকালে প্রখ্যাত কবি কালিদাসের ‘রঘুবানসা’ গ্রন্থে তিনি এ অঞ্চলকে গঙ্গানদীর প্রবাহের দ্বীপ দেশ বলে আখ্যায়িত করেন, যার অধিবাসীগণ জীবনের সকল কর্মকান্ডে নৌকা ব্যবহার করতো। এমনকি যুদ্ধেও নৌকার ব্যবহার ছিল। এ অঞ্চলের জনসাধারণ নৌ বিদ্যায় পারদর্শী ছিল। পরবর্তীতে বদ্বীপ অঞ্চল ক্রমে ক্রমে দক্ষিণে সরে যায় এবং ব্রক্ষ্মপুত্র, গঙ্গা ও অন্যান্য নদী বাহিত পলি দ্বারা এ অঞ্চল গঠিত হয়।


গুপ্ত যুগ (৪র্থ শতক থেকে ৫৪৪ খৃষ্টাব্দ)

গুপ্তবংশের রাজত্বের পূর্ববর্তী বেশ কিছু কাল এ অঞ্চলের ইতিহাস ছিল কিছুটা অষ্পষ্ট। সমুদ্রগুপ্তের (৩৪০-৩৮০ খৃঃ) আলনাবাদ সামন্তের শিলালিপি ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময়ের কতিপয় স্বর্ণমুদ্রা আবিষ্কারের ফলে এটা প্রমাণিত হয় যে, এ অঞ্চল গুপ্ত রাজবংশের অধীনস্থ এলাকা ছিল। বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া সদর হতে তিন চতুর্থাংশ মাইল দূরে গোয়াখোলা গ্রামে সোনাকান্দুরী নামক এক মাঠ খননকালে প্রাপ্ত মুদ্রায় এ সকল তথ্য আবিষ্কৃত হয়।
পরবর্তীকালে তাম্র থালা আবিষ্কার এবং তার উপর খোদাই করা মিঃ এফই পারগিটার কর্তৃক পাঠোদ্বারকৃত বক্তব্যে বুঝা যায় যে, ৬ষ্ঠ শতকে বংগের এ অঞ্চল অপর একটি রাজবংশ দ্বারা পারিচালিত হয়েছিল।মিঃ পারগিটারের মতে আনুমানিক ৫৩১ ও ৫৬৭ খৃষ্টাব্দে প্রস্ত্ততকৃত দু’টি তাম্র থালাতে লিপিবদ্ধ বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ধর্মাদিত্য নামক এক রাজা এ অঞ্চল শাসন করেন। তৃতীয় অপর একটি তাম্র থালার লিপিতে প্রাপ্ত তথ্যে রাজা গোপালচন্দ্র এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন তার আভাস পাওয়া যায়। ডঃ হর্ণলে ধর্মাদিত্যকেই সম্রাট যশোধর্মন হিসেবে বর্ণনা দেন, যিনি একজন ন্যায় ও ধার্মিক রাজা ছিলেন এবং এ কারণেই তিনি ধর্মাদিত্য নামে পরিচিত ছিলেন। চতুর্থ তাম্র থালা যা কোটালিপাড়ার নিকটবর্তী ধাগড়াহাটিতে আবিষ্কৃত হয়েছে তার শিলালিপি উদ্ধারের ফলে এটা প্রমাণিত হয় যে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ৬১৫ হতে ৬২০ খৃষ্টাব্দ সময় কালে ‘সমাচারদের’ নামক একজন স্বাধীন রাজা এ অঞ্চল শাসন করেন। মিঃ পারগিটারের সাথে সমসাময়িক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বাবু রাধা গোবিন্দও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। সমাচারদের গুপ্ত বংশের বাইরের রাজা যিনি শশাঙ্কের শাসন কালের পূর্ব পর্যন্ত এ অঞ্চল শাসন করেছেন।


প্রখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩০ হতে ৬৪৩ সালের মাঝে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন যখন হর্ষবর্ধন ছিলেন ভারতের ক্ষমতার শীর্ষে। ঐ সময় তাঁর লেখাতেও জানা যায় যে, সপ্তম শতকের মাঝামাঝি সময় এ ‘বংগ’ হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

৬৪৭ খৃষ্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ‘বংগের’ এ জেলা সহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন রাজাগণ তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। এরপর বেশ কিছুকাল এ অঞ্চল কোন কোন রাজা দ্বারা শাসিত হয়েছে তার ঐতিহাসিক তথ্যাদি অপর্যাপ্ত। কিন্তু কিছু তাম্র ফলকের বক্তব্য হতে জানা যায় যে, ‘খাদগাস’ রাজতন্ত্রের অধীনে এ অঞ্চল ৬৫০ খৃষ্টাব্দ হতে ৭০০ খ্রষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসনাধীন ছিল।
শরীয়তপুর জেলার জন্য এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে এ জেলার দুটি স্থান ইদিলপুর ও কেদারপুরে এবং বর্তমানে মুন্সিগঞ্জের রামপাল অঞ্চল হতে আবিষ্কৃত তাম্র ফলকের খোদাইকৃত বক্তব্য হতে জানা যায় যে, এ অঞ্চল ‘চন্দ্রা’ নামক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শাসকগণ দ্বারা পরিচালিত হতো। দশম শতাব্দী হতে একাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এ অঞ্চল ঐ রাজগোষ্ঠি কর্তৃক শাসিত হয়েছিল।


১০৮০ খৃষ্টাব্দ হতে ১১৫০ খৃষ্টাব্দ সময়কাল ঢাকার বিক্রমপুর হতে ‘বর্মন’ নামক হিন্দু পরিবার এ অঞ্চলকে শাসন করেন। এদের মধ্যে বজবর্মন, জাতা বর্মন, হরি বর্মন, সামালা বর্মন ও ভোজা বর্মনের নাম উল্লেখযোগ্য। সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত ‘রামচরিতা’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ১০৮২ হতে ১১২৪ সাল নাগাদ রামপাল উত্তর বঙ্গ শাসন করেন। এ রামপালই ঐ সময় পূর্ব বঙ্গের শাসক একজন বর্মন রাজা, খুব সম্ভব দ্বিতীয় রাজ জাতা বর্মনকে এ অঞ্চল শাসন করার কর্তৃত্ব প্রদান করেন। এ বর্মন রাজগোষ্ঠী অর্ধ স্বাধীনভাবে এ জেলা সহ পূর্ব বঙ্গের অঞ্চল পরবর্তীতে সেন রাজবংশ কর্তৃক বিতাড়িত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শাসন করেন।



এরপর শুরু হয় সেন বংশের রাজত্ব। সেন বংশের তৃতীয় রাজা বিজয়সেন (খৃঃ ১০৯৭-১১৬০) শরীয়তপুর অঞ্চলের শাসক ছিলেন। বিজয়সেনই বংগের দক্ষিন পূর্বাঞ্চল হতে বর্মন শাসকদের এবং উত্তরাঞ্চল হতে ‘পাল’ রাজবংশকে উৎখাত করেন। সময়টি দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। তার উত্তর সূরী বল্লাল সেন (খৃঃ ১১৬০ হতে ১১৭৯) একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন যার সুখ্যাতি সর্বত্র বিস্তৃত ছিল। বিজয়সেন ও বল্লালসেন দুজনই শিবের পূজা করতেন এবং তারা পরোপকারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। বল্লালসেন আঠারো বছর রাজত্ব করেন এবং তার পর তিনি তার পুত্র লক্ষণসেনের (খৃঃ ১১৭৮ হতে ১২০৬) হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। রাজা লক্ষণসেন ১২০৪ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। ঐ বছরই মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বাংলা আক্রমন করেন এবং সেন রাজাদের রাজধানী নদীয়া দখল করেন। এর ফলে এ বয়োবৃদ্ধ রাজা রাজধানী হতে পলায়ন করে ঢাকার বিক্রমপুরে অবসর নেন। পরবর্তীতে তাঁর বংশধরগণ কয়েক যুগ এ অঞ্চলে রাজত্ব করেন। বংশধরগণের মধ্যে বিশ্বরুপসেন ১২০৬ হতে ১২২০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যকাল পর্যন্ত সেনগণ বিনা বাধায় রাজত্ব করেছিলেন। সেনগণ ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিক্রমপুর হতে তাদের শাসন ক্ষমতা হারান। ঐ সময় দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার (কুমিল্লা-নোয়াখালী) শাসক, দেব রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দামোদর দেবের বংশধর দশরথদেব সেন রাজবংশকে উৎখাত করে শরীয়তপুর অঞ্চলসহ এ এলাকার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তখনকার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বিক্রমপুর হতে প্রদত্ত দশরথ দেবের অদ্যাবধি থালা (ক্ষমতা প্রদান পত্র) হতে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দশরথদেবই হচ্ছেন জানামতে শেষ হিন্দু রাজা যিনি শরীয়তপুর এলাকা সহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাকে শাসন করেন এবং এর পরেই এ অঞ্চল মুসলমানগণের শাসনে চলে আসে।



মুগল পূর্ব যুগ (চতুর্দশ শতক হতে ১৫৭৫ সাল)

স্যার উইলিয়াম হান্টারের ঢাকা জেলা পরিসংখ্যান বিবরণী পুস্তকে প্রফেসর ব্লকম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, ১২০৩-০৪ সালের দিকে মুসলমানগণ কর্তৃক বাংলা দখল হলেও মূলতঃ আজকের বাংলাদেশ অঞ্চলসহ পূর্বাঞ্চলের এ এলাকা ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ বল্লাল সেনের বংশধরগণ সম্রাট বলবনের নাতী কর্তৃক সোনারগাঁও দখল না করা পর্যন্ত শাসন করে এসেছিলেন। ১৩৩০ সালে মুহম্মদ বিন তুগলক পূর্ব বংগ দখল করেন এবং এ অঞ্চলকে তিনটি প্রদেশে ভাগ করেন। লাখানুতি, সাতগাঁও ও সোনারগাঁও। সোনারগাঁও এর গভর্ণর ছিলেন তাতার বাহরাম খান। ১৩৩৮ সালে বাহরাম খানের মৃত্যুর পর তারই অস্ত্রবাহী ফখরুদ্দিন এ অঞ্চলের ক্ষমতা দখল করে মুবারক শাহ উপাধি নিয়ে দশ বছর শাসন করেন। ১৩৫১ সালে সামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ এবং তার পুত্র সিকান্দার শাহ কর্তৃক সমস্ত বাংলা পুনরায় একত্রিকরণ করা হয়। সোনারগাঁও ক্ষমতাসীনদের প্রধান কেন্দ্রস্থল হওয়াতে প্রায়ই এ অঞ্চল বিভিন্ন বিদ্রোহের শিকার হয়েছিল। পরবর্তীতে সিকান্দার শাহর পুত্র আজম শাহ এর উত্তরাধিকারী হন। এরপর আজম শাহর উত্তরাধীকারীগণ রাজা খান কর্তৃক উচ্ছেদ হন। ফলে পুর্বাঞ্চলীয় জেলা সমূহ রাজা খানদের দখলে চলে যায়। কিন্তু ১৪৪৫ সালের দিকে ইলিয়াস শাহের বংশধর মাহমুদ শাহ (প্রথম) কর্তৃক বাংলা আবার একীভুত হয় এবং তিনি ১৪৮৭ সাল নাগাদ দেশ শাসন করেন। এই সময় বাংলার ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ অঞ্চল নিয়ে জালালাবাদ এবং ফতেহবাদ প্রদেশ গঠন করা হয়। মিঃ ভিনসেন্ট স্মিথের মতে, হোসেন শাহ ১৪৯৩ হতে ১৫১৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত এ দেশ শাসন করেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ বাংলার মুসলিম রাজা। প্রফেসর ব্লকম্যানের মতে, হোসেন শাহ প্রথমে ফতেহবাদের (বৃহত্তর ফরিদপুর) ক্ষমতা দখল করেন এবং সেখানে তার প্রথম মুদ্রা ছাপানো হয়।


ফতেহবাদ হোসেন শাহের প্রধান শহর ছিল যা কিনা বর্তমানের ফরিদপুর শহর। জালালউদ্দিন ফতেহশাহ নামক লাকনুতি প্রদেশের শাসকের নামানুসারে ফতেহবাদ নামকরণ হয়। ফতেহবাদ ফরিদপুর, ঢাকা, বাকেরগঞ্জ, দক্ষিণ শাহবাজপুর ও সন্দ্বীপ এলাকা নিয়ে গঠিত একটি সরকার বা বিভাগ ছিল।



মুগল যুগ

মুগলদের রাজত্বের সময়ে (১৫৭৬-১৭৫৭) সম্রাট আকবরের নির্দেশে ১৫৭৪ সালে মুরাদখান নামে এক সেনাপতির নের্তৃত্বে দক্ষিণ-পুর্ব বাংলা অভিযান হয়। ‘আকবর নামা’র বিবরণ অনুযায়ী ঐ সেনাপতি ফতেহবাদ (ফরিদপুর) ও বাকেরগঞ্জ দখল করেন। জনাব মুরাদ খান এরপর ফরিদপুরেই থেকে যান এবং ছয় বছর পর এখানেই তার মৃত্যু হয়। ফরিদপুর হতে ১৩ মাইল দূরে খান খানাপুরেই খুব সম্ভব তার বাসস্থান ছিল। পরবর্তীতে তাঁর ছেলেরা মুকুন্দ নামক এক হিন্দু জমিদারের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে এক ভোজের নিমন্ত্রণে এসে নিহত হন।
আকবরের সময়েও মূলতঃ এ অঞ্চল মুগলদের দখলে যেতে পারেনি। এ অঞ্চল তখন প্রধানতঃ কতিপয় মুসলমান ও হিন্দু স্থানীয় প্রধানদের দ্বারা শাসিত হতো। ইংরেজ ব্যবসায়ী রালফ ফিচ, যিনি বাংলার এ অঞ্চল ভ্রমন করেন, তিনি উল্লেখ করেন যে এখানে তখন বহু বিদ্রোহী ছিল যারা আকবরের শাসনকে গ্রহণ করে নি। রালফ ফিচের মতে ‘‘এখানে অনেক নদী, দ্বীপ থাকার ফলে বিদ্রোহীগণ একস্থান হতে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াতো যার ফলে আকবরের অশ্ব বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে টিকতে পারতো না’’। এ সময় বাংলার শাসকগণই মূলতঃ বারো ভূঁইয়া নামে খ্যাত যাদের মধ্যে ঈশা খান প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন।

[সম্পাদনা]মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় নেতা জনাব মোঃ আবদুর রাজ্জাক, কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী, শহীদ সরদার সিরাজউদ্দিন আহমদ ও হাজারো মুক্তিযোদ্ধা যারা এ জেলার সন্তান। দেশ মাতৃকাকে শত্রুর হাত হতে মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন জনাব আক্কাস, ইঞ্জিনিয়ার বাদশা আলম শিকদার, সরদার মহিউদ্দিন, ডাঃ কাঞ্চন, সরদার সিরাজ সহ বহু নাম না জানা শহীদ। তাঁদের রক্তে প্লাবিত হয়েছে এ জনপদ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যারা যুদ্ধ পরিচালনায় ছিলেন তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে বর্নিত হল। সাবেক মাদারীপুর মহকুমার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন কর্ণেল শওকত আলী ও স্টুয়ার্ড মজিবর রহমান। অন্যান্য এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসকগণ হলেনঃ
শরীয়তপুর এলাকা : আলী আজম শিকদার
পালং-নড়িয়া :ইউনুস আলী (মিতালী)
জাজিরা-শিবচর : মোসলেহ উদ্দিন খান
ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট : আনোয়ার হোসেন (মিন্টু)
গোসাইরহাট : ইকবাল আহম্মেদ (বাচ্চু)
ডামুড্যা :ওহাব আলী, শাহদাত হোসেন খান
ভেদরগঞ্জ নড়িয়া : কামাল হোসেন (মন্টু)/দিদারুল ইসলাম
পালং : ইদ্রিস আলী মাষ্টার
জাজিরা : আব্দুল রহমান ও ফজলুর রহমান
এছাড়া অন্য দু’টি বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন যে দু’জন তারা হচ্ছেনঃ
আক্কাস ফোর্স কমান্ডারঃ সুবেদার জয়নাল
মুজিব বাহিনী কমান্ডারঃ মাষ্টার আবুল ফজল
সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে আসীন ব্যক্তিগণের মধ্যে শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান আব্দুর রাজ্জাক ও কর্ণেল (অব:) শওকত আলীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

[সম্পাদনা]বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

১।অতুল প্রসাদ সেন, পদবী : ব্যারিষ্টার ও গীতিকার, পিতার নাম : রামপ্রসাদ সেন, ঠিকানা : গ্রাম- মগর, থানা- নড়িয়া, জন্ম : ২০ অক্টোবর, ১৮৭১, কর্ম : তিনি আইন ব্যবসা ও গানের গীতিকার ছিলেন। মৃত্যু : ২৬ আগষ্ট ১৯৩৪
২।এম আজিজুল হক, পদবী : সাবেক উপদেষ্টা, পিতার নাম : এম এন এ জনাব আবদুর রহমান বকাউল, ঠিকানা : গ্রাম-দিগর মহিষখালী, থানা-ভেদরগঞ্জ, জন্ম : ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪০, কর্ম : ঢাকা ও চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার,ডিআইজি, এবং পুলিশের মহাপরিচালক ছিলেন।
৩।আতাউল হক, পদবী : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পিতার নাম : আবুল ফারাহ মুহাম্মদ আবদুল হক, ঠিকানা : গ্রাম-পাকইকপাড়া, থানা-নড়িয়া, জন্ম : ১৪ জুলাই ১৯৪০, কর্ম : বগুড়ার জেলা প্রশাসক, কেবিনেট ডিভিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন ।
৪।আব্দুর রাজ্জাক, পদবী : ভাস্কর্য শিল্পী, পিতার নাম : আলহাজ্জব সাদর আলী আমিন, ঠিকানা : গ্রাম-দিগর মহিষখালী, থানা- ভেদরগঞ্জ, জন্ম : ৫ নভেম্বর ১৯৩২, মৃত্যু : ২৩ অক্টোবর ২০০৫, কর্ম : ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষক, চারুকলা ইনস্টিটিউট এর প্রথম পরিচালক ও ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান ছিলেন ।
৫।আব্দুর রাজ্জাক, পদবী : প্রাক্তন পানি সম্পদ মন্ত্রী, পিতার নাম : আলহাজ্জ্ব ইমাম উদ্দিন, ঠিকানা : গ্রাম-দক্ষিন ডামুড্যা, থানা- ডামুড্যা, জন্ম : ০২ মে ১৯৪০, মৃত্যুঃ ২০১১, কর্ম : বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য।
৬।আবু ইসহাক, পদবী : ঔপন্যাসিক, পিতার নাম : মোঃ এবাদ উল্লাহ, ঠিকানা : গ্রাম-ফতেজঙ্গপুর, থানা-নড়িয়া, জন্ম : ০১ নভেম্বর ১৯২৬, কর্ম : সিভিল সাপ্লাই এর পরিদর্শক, পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন । মৃত্যু : ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৩।
৭।গীতা দত্ত, পদবী : বিশিষ্ট গায়িকা, স্বামীর নাম : গুরুদত্ত, ঠিকানা : গ্রাম-ইদিলপুর, থানা-গোসাইরহাট, জন্ম : ১৯৩১ সাল, কর্ম : হিন্দী চিত্রে প্লে-ব্যাক গায়িকা ও ফিল্ম রেকর্ডের গায়িকা। মৃত্যু : ২০ জুলাই ১৯৭২,
৮।গুরুপ্রসাদ সেন, পদবী : বাংলাদেশের ১ম এম.এ, পিতার নাম : কাশীচন্দ্র, ঠিকানা : ডোমসার, শরীয়তপুর, জন্ম : ২০ মার্চ ১৮৪৩, কর্ম : কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা, মৃত্যু : ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯০০
৯।গোপাল চন্দ্র ভট্রাচার্য্য, পদবী : বৈজ্ঞানিক, পিতার নাম : অন্বিকা চরণ ভট্রাচার্য, ঠিকানা : লোনসিং, নড়িয়া, জন্ম : ০১ আগষ্ট ১৮৯৫, কর্ম : শিক্ষকতা, মৃত্যু : ৮ এপ্রিল ১৯৮১,
১০।গোষ্ট পাল, পদবী : ফুটবলার, পিতার নাম : শ্যাম লাল পাল, ঠিকানা : ভোজেশ্বর, নড়িয়া, জন্ম : ২০ আগষ্ট ১৮৯৬, কর্ম : ফুটবল খেলোয়ার, ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ পদকে ভূষিত করেন। তিনিই সারা ভারতে প্রথম ফুটবলার যিনি এ পদকে ভূষিত হয়েছেন। মৃত্যু : ৮ এপ্রিল ১৯৭৫,
১১।কর্নেল (অব:) শওকত আলী, পদবী : মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,সংসদ সদস্য এবং ডেপুটি স্পীকার, পিতার নাম : মুনশি মোবারক আলী, ঠিকানা : লোনসিংহ, বাহের দিঘীর পাড়, নড়িয়া জন্ম : ২৭ জানুয়ারি ১৯৩৭ সাল
১২।শামীম সিকদার, পদবী : ভাস্কর্য শিল্পী, পিতার নাম : আলহাজ্জ্ব আবদুর রাজ্জাক ঠিকানা : লাকার্তা, ভেদরগঞ্জ। জন্ম : ২২ অক্টোবর ১৯৫৩ সাল কর্ম : ঢাকা আর্ট কলেজের অধ্যাপক কর্ম : সেনাবাহিনী কমিশন, কর্নেল ছিলেন ।
১৩।হাজী শরীয়তুল্লাহ্, পদবী : মুসলিম সংস্কারক, পিতার নাম : আবদুল জলিল তালুকদার ঠিকানা : গ্রাম-শামাইল, শিবচর, মাদারীপুর। জন্ম : ১৭৮১ সাল কর্ম : ইসলাম ধর্মের জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। মৃত্যু : ১৮৪০ সাল

[সম্পাদনা]অর্থনীতি

এই জেলায় বসবাসকারী মানুষের বেশীর ভাগ কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। উৎপাদনশীল শস্যের মধ্যে রয়েছে ধানপাটগমপিঁয়াজমিষ্টি আলুটমেটো প্রভৃতি। এর মধ্যে পাটপিঁয়াজআদাটমেটো প্রধান রপ্তানী পণ্য হিসেবে বিবেচিত।
শিল্প ও বাণিজ্য
এই জেলায় শিল্প কারখানা তেমন গড়ে উঠেনি। বর্তমানে এ জেলায় নিম্নোক্ত শিল্পগুলো আছে। চাউলের কল : ১৬৪ টি।আটার কল : ১১২ টি।ময়দার কল : ৪ টি।বরফের কল : ১৩ টি। তেলের কল : ৩ টি।

[সম্পাদনা]পত্র-পত্রিকা

দৈনিক রুদ্রবার্তা (dailyrudrabarta@yahoo.com),
দৈনিক হুংকার (hongkar96@yahoo.com),
দৈনিক বর্তমান এশিয়া (bortamanasia@yahoo.com),
দৈনিক যুগন্ধর (dailyjugandhar@gmail.com),
সাপ্তাহিক বার্তাবাজার (bartabazar@yahoo.com),
সাপ্তাহিক কাগজের পাতা (pilotshariatpur@yahoo.com) এবং
সাপ্তাহিক শরীয়তপুর সংবাদ (hongkarharun@yahoo.com)

[সম্পাদনা]যোগাযোগ ব্যবস্থা

১৯৯২ সাল পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত পশ্চাদপদ ছিল এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। সারা জেলার মধ্যে মাত্র ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাঁকা ছিল। জেলাটি মূলত নতুন করে সৃষ্টি হওয়ার ফলেই এ ধরণের অবস্থা। তবে জেলা সৃস্টি হওয়ার ফলে ক্রমে ক্রমে রাস্তা ঘাটের উন্নতি হচ্ছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত অবশ্য প্রত্যেক উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি প্রায় অধিকাংশ গ্রামের সাথেই সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। পূর্বে শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে দেশের রাজধানী ও অন্যান্য জেলায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌ পথে। কাঁচা রাস্তায় সেই বালার চর হতে জনসাধারণকে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আঙ্গারিয়া গিয়ে সেখান থেকে লঞ্চে মাদারীপুর গিয়ে মামলা মোকদ্দমা করতে হতো। পূর্বের জেলা সদর ফরিদপুর যেতে শরীয়তপুরের কোন কোন গ্রামবাসীর কমপক্ষে ২ দিন সময় লাগতো। ক্রমে ক্রমে রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের সাথে সাথে এবং শরীয়তপুরে জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে সে অসুবিধা কিছুটা লাঘব হয়েছে। বর্ষাকালে নৌকাই ছিল প্রধান বাহন। ১৯৫০ সালের পূর্বে এ অঞ্চলের জনসাধারণ গয়নার নৌকা করে পাশ্ববর্তী চাঁদপুর, ঢাকা বা নারায়নগঞ্জে যাতায়াত করতো। নৌকায় করে দক্ষিণে ভাটির দেশ বরিশালে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে গয়নার নৌকার স্থান দখল করলো লঞ্চ ও স্টিমার। পূর্বে ভোজেশ্বর, সুরেশ্বর ও পট্টিতে স্টিমার ঘাট ছিল। কিন্তু বর্তমানে ঐ স্থানে আর স্টিমার ভিড়তে পারছেনা। ১৯৯১ সালের দিকে পট্টিতে নতুন করে স্টিমার ভিড়েঠে। বর্ষাকালে শরীয়তপুর, ওয়াপদা ঘাট, আঙ্গারিয়া, ভোজেশ্বর, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, লাউখোলা, ডামুড্যা, সুরেশ্বর, পট্টি প্রভৃতি স্থান হতে লঞ্চের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়। শুষ্ক মৌসুমে শুধুমাত্র সুরেশ্বর, ওয়াপদা ঘাট, লাউখোলা ও পট্টি লঞ্চ ভিড়ে। বর্ষাকালে মূল বাহন নৌকা। ইদানিং ট্রলার চালু হওয়ায় যাতায়াত কিছুটা সহজতর হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে অবশ্য কাঁচা রাস্তা দিয়েও রিক্সা চলাচল করতে পারে। সব ক’টি থানার সঙ্গেই এখন পাঁকা রাস্তায় যাতায়াত করা যায়। মাদারীপুর হতে শরীয়তপুর হয়ে সুরেশ্বর পর্যন্ত বাস চলাচল করে। সেখান থেকে লঞ্চে ঢাকা বা চাঁদপুর যাওয়া যায়। বহুকাল পর্যন্ত শরীয়তপুরের জনসাধারণের রাজধানীতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যমেই ছিল লঞ্চ। শুষ্ক মৌসুমে সুরেশ্বর, ওয়াপদা ঘাট, লাউখোলা ও পট্টি হতে জনসাধারণ লঞ্চে উঠে ঢাকায় পৌছেন। বর্তমানে শরীয়তপুর হতে বাসযোগে মঙ্গল মাঝিরঘাট ও মাওয়া ঘাট হতে ঢাকায় সহজে যাতায়াত করা হয়।

[সম্পাদনা]খেলাধূলা ও বিনোদন

খেলাধুলা
এ অঞ্চলের আদি খেলা হচ্ছে হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা, ষোলকড়ি, মার্বেল, মঙ্গলপাছা, বায়োস্কোপ, বউ-জামাই, লুকোচুরি, লুডু, পুতুল খেলা ইত্যাদি। ক্রমবিকাশের সাথে এ সকল খেলার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, দাবা, ক্যারাম প্রভৃতি খেলা। ক্রিকেট খেলা খুব হয় না এ অঞ্চলে। তবে সম্প্রতি শিশু কিশোরদের মধ্যে এ খেলা দেখা যায়।
বিভিন্ন থানায় প্রতিযোগিতা ভিত্তিক ফুটবল, ভলিভল, হা-ডু-ডু ও ব্যাটমিন্টন খেলা হয়ে থাকে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যে লালিত যে প্রতিযোগিতা এখানেও পরিদৃষ্ট হয় তা হচ্ছে নৌকা বাইচ। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এখানে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতা হয়। পৌষ ও চৈত্র সংক্রান্তিতে পূর্বে এখানে ষাঁড়ের দৌড় হতো। ইদানিং এটা খুব একটা দেখা যায় না।
ফুটবল খেলায় সারা ভারতবর্ষব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন এদেশের ভোজেশ্বরের সন্তান গোষ্ট পাল। ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ পদকে ভূষিত করেন। তিনিই সারা ভারতে প্রথম ফুটবলার যিনি এ পদকে ভূষিত হয়েছেন। আব্দুল মোতালেব সরদার কোলকাতার মোহামেডানের রাইট হাফে খেলতেন।
বিনোদন
এমন কিছু অনুষ্ঠান এ এলাকায় উদযাপিত হয় যা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষই উদযাপন করে। যেমন বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাখের দিনে এ অঞ্চলে যেন আনন্দের বান ডাকে। ব্যবসায়ীগণ শুভ হালখাতার অনুষ্ঠান করে। হিন্দুগণ মিষ্টি বিতরণ করে। মুসলমানগণ মিলাদ মাহফিলে মাধ্যমে উন্নত খাবার দাবারে দিবসটি পালন করে। প্রকৃতিও যেন এ সময়ে নব অনুরাগে স্নাত হয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানায়। এ অঞ্চলে নতুন বছরের আগমনে বৈশাখী মেলা বসে। ভেদরগঞ্জ থানার মহিষার দিগম্বর সন্ন্যাসীর প্রাঙ্গনে বিশাল মেলা হয়। মেলা সপ্তাহব্যাপি চলে। জেলার সকল অঞ্চল হতে মানুষ এ মেলায় যোগ দেয়। এ ছাড়া মনোহর বাজার ও অন্যান্য স্থানেও এ মেলা হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে কোটাপাড়া (পালং), বিলাসখান, মনোহর বাজার, রামভদ্রপুর (ভেদরগঞ্জ) মেলা বসে। মাঘ মাসে পন্ডিতসারে (নড়িয়া) রাম সাধুর মেলা বসে।

[সম্পাদনা]ভাষা ও সংস্কৃতি

ভাষা
শরীয়তপুর জেলার জনগণের সমাজ, সংস্কৃতি ও ভাষা সমগ্র বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । ভাষাগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের সকল অঞ্চলেরই কিছু না কিছু স্বাতন্ত্র্য আছে যা হতে শরীয়তপুর ব্যতিক্রম নয় । এ জেলার ভাষা অনেক দিক দিয়ে বিক্রমপুর অঞ্চলের ভাষা ও বাচনভঙ্গির সংগে বেশ মিল আছে । পূর্বে শরীয়তপুর অঞ্চল বিশাল বিক্রমপুর হিসেবেই পরিচিত ছিল তা ভাষার সাদৃশ্য দিয়ে বিচার করা যায় । তাছাড়া বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানাদিরও বিক্রমপুর অঞ্চলের সাথে ব্যাপক সাদৃশ্য আছে । শরীয়তপুরের কোন কোন অঞ্চলের ভাষা নিম্নরুপঃ ‘তুই কুন্ডে যাস’ (তুই কোথায় যাস); ‘ আমি না কালামের লগে হেট্রে গেছিলাম’ (আমি কালামের সংগে সেখানে গিয়েছিলাম); ‘তোর লগে আমি কথা কইমুনা’ ( তোর সাথে আমি কথা বলব না) এছাড়া স্থানীয় কতগুলো শব্দ আছে যা অন্যান্য স্থানে ততো অধিক প্রচলিত নয় । যেমনঃ প্যাঁক (কাঁদামাটি); হরমাইল (পাটখড়ি); মুরগা (মোরগ); আন্ডা/বয়জা (ডিম), ল্যাম (প্রদীম), অহন (এখন), লাহান (মতো) ইত্যাদি । ভাষার ব্যবহারের দিক দিয়ে আবার শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যেও একটু একটু বৈশাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। যেমন জাজিরা থানার লোকের ভাষার সংগে ডামুড্যা থানার মানুষের বাচনভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে। গোসাইরহাট অঞ্চলের সাথে বরিশালের ভাষার মিল আছে। পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের সাথে জেলার বিল অঞ্চলের মানুষের ভাষা, চালচলন, রীতিনীতিতেও বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ।
বিবাহ
ধর্ম এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। কি হিন্দু কি মুসলমান প্রত্যেকেই ধর্মের অনুশাসন ব্যাপকভাবে মেনে চলে। বিয়ে শাদির ব্যাপারে এর প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিয়ে শাদির ব্যাপারটা প্রধানত ঘটকালির মাধ্যমে আলাপ-আলোচনায় সমাধা হয়ে থাকে। তবে নিজেদের পাত্রী পছন্দ করতে কোন বাধা নেই, কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিভাবকগণ ব্যাপারটা মেনে নিলেই সোনায় সোহাগা। যে ক্ষেত্রে মুরুব্বিরা এটা গ্রহণ করেননা সে ক্ষেত্রে যত বিপত্তি। বিয়েতে এখনও বর কনের বহনের জন্য পালকি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পালকির প্রচলন আস্তে আস্তে যদিও কমে আসছে তথাপি এ জেলায় এখনও এটাই প্রধান বাহন। পালকির পেছনে দলবেঁধে বরযাত্রীর গমন, রাত্রি জেগে কনে সাজিয়ে শেষরাতে কনেসহ আবার পালকির সরদারদের সজোরে গান গেয়ে হেজাক লাইটের আলোতে রাস্তাঘাট আলোকিত করে ঘরে ফেরার মধ্যে একটা বিশেষ আনন্দ বোধ করে এদেশের মানুষ। বর-কনেকে বাড়িতে এনে বিভিন্ন ছন্দায়িত গানে, বিভিন্ন ঘর হতে পালকির সরদারদের বখশিশ সংগ্রহও একটা মজার ব্যাপার। তারপর কনেকে নামিয়ে ঘরে তোলার আনন্দও উপভোগ্য। হিন্দুদের বিবাহ অনুষ্ঠানও বেশ আনন্দের। দলবেঁধে তারাও বরযাত্রী হয়ে কনে তুলে আনেন। সম্প্রতি শরীয়তপুরের সড়ক ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হওয়ায় পালকির বদলে গাড়ি বা বাসেও বরযাত্রী গমন আরম্ভ হয়েছে। এখন ঢাকা হতে বরযাত্রী গিয়ে দুপুরের আহার সমাপনান্তে সন্ধ্যায় নতুন বধুসহ ঢাকা ফিরে আসা সম্ভব হচ্ছে। এ অঞ্চলে গ্রামীণ সাধারণ কৃষক পরিবারের মেয়েদেরে ১৫ হতে ২০ বছর বয়সেই বিয়ে হয় আর ছেলেদের হয় ২০ হতে ২৫ বছরের মধ্যে। তবে শিক্ষিত পরিবাগুলোতে কনের বয়স কমপক্ষে ২০ না হলে বিয়ে দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে বরের বয়স হয় ২৫ হতে ৩০ বছর। বিয়ে সাধারণত কাজী অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়।
জন্মদিন
এ অঞ্চলে সুষ্পষ্টভাবে জন্মদিনের অনুষ্ঠান খুব একটা হয় না। তবে ‘আকীকা’র প্রথা আছে। মুসলমান পরিবারে ছেলে সন্তান জন্মগ্রহন করলে আজান দেয়া হয়। হিন্দুদের ঘরে ছেলে হলে উলু ধ্বনি দেয়া হয়। স্বচ্ছল পরিবারে ইদানিং জন্ম দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
মৃত্যু
মৃত্যুতে এখানে ৪০ দিনের মাথায় ‘চেহলাম’ অনুষ্ঠানে গরীব লোকজনের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। হিন্দুদের মধ্যে শ্রাদ্ধ প্রথা চালু আছে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান
এ অঞ্চলে মুসলমানগণ ঐতিহ্যগতভাবেই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পাদন করে থাকে। পবিত্র রমজান মাসে প্রত্যেক পরিবারেই রোজা রাখা হয়। রোজাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় ইফতার ও রাত্রে সেহেরি খাওয়া হয়। ইফতার ও সেহেরিতে তুলনামূলক অধিকতর উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করা হয়। রোজা শেষে ঈদুল ফিতরে প্রত্যেকে নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী নতুন কাপড় চোপড় কিনে পরিধান করে। স্বচ্ছল ব্যক্তিগণ গরীব আত্মীয় স্বজনের মধ্যেও কাপড় চোপড় কিনে বিতরণ করে। উপাদেয় খাবার তৈরি করে নিজেরা এবং পাড়া পড়সিদের নিয়ে ঈদের দিনকে উপভোগ করে। ঈদুল আজহার সময় ধনী ব্যক্তিরা কেউ কেউ একটি পুরো গরু কিনে কোরবানি দেন। আত্মীয়-স্বজন ও গরিব জনসাধারণের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন। তুলনামূলকভাবে কম স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বেশির ভাগই সাত ভাগে গরু কিনে কোরবানি দেন। জেলার ব্যাপক জনগণই কোরবানি দেওয়ার ক্ষমতা হতে বঞ্চিত। তাদের হয় স্বচ্ছল আত্মীয়-স্বজন হতে প্রাপ্ত মাংস দিয়ে ঈদ করতে হয় নতুবা নিজের পালিত একটি মুরগী বা হাঁস দিয়ে দিনটি উৎযাপন করে। একটি গ্রামে গড়ে শতকরা ১২ হতে ১৫টি পরিবার কোরবানি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মহররম মাসের ১০ তারিখও মুসলমানগণ হযরত হাসান ও হোসেন (রাঃ) এর স্মৃতিতে মর্সিয়া করে। কেউ উপাদেয় খাদ্য গ্রহন করে। অন্যান্য মুসলিম অনুষ্ঠানও সীমিত সংখ্যক লোকেরা পালন করে থাকে। হিন্দুদের প্রধান অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে দূর্গা পূজা, লক্ষ্মী পূজা, কালি পূজা, স্বরস্বতী পূজা, কার্তিক পূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আশ্বিন মাসে বেশ জাঁকজমকভাবেই দূর্গাপূজা উদযাপিত হয় এ জেলার বিভিন্ন স্থানে। মনোহর বাজার, শরীয়তপুর, ভোজেশ্বর, নড়িয়া, ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাটের বিভিন্ন এলাকায় পূজা সমারোহে উদযাপিত হয়। তবে ব্রিটিশ ভারতের সময় এ পূজা আরও সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো। বহু নামি দামি হিন্দুর দেশত্যাগের ফলে অনুষ্ঠান বর্তমানে ততোটা ধুমধামে উদযাপিত হয় না। অবশ্য সরকারি সহায়তা ও সকল ধর্মের মানুষের এ ব্যাপারে ব্যাপক সহমর্মিতা আছে।
মেলা
এমন কিছু অনুষ্ঠান এ এলাকায় উদযাপিত হয় যা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষই উদযাপন করে। যেমন বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখের দিনে এ অঞ্চলে যেন আনন্দের বান ডাকে। ব্যবসায়ীগণ শুভ হালখাতার অনুষ্ঠান করে। হিন্দুগণ মিষ্টি বিতরণ করে। মুসলমানগণ মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে উন্নত খাবার-দাবারে দিবসটি পালন করে। প্রকৃতিও যেন এ সময়ে নব অনুরাগে স্নাত হয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানায়। প্রতিটি গাছেই নতুন পালবে নবজীবন লাভ করে। এ অঞ্চলে নতুন বছরের আগমনে বৈশাখী মেলা বসে। ভেদরগঞ্জ থানার মহিষার দিগম্বর সন্ন্যাসীর প্রাঙ্গনে বিশাল মেলা হয়। মেলা সপ্তাহ খানেক চলে। জেলার সকল অঞ্চল হতে মানুষ এ মেলায় যোগ দেয়। এ ছাড়া মনোহর বাজার ও অন্যান্য স্থানেও এ মেলা হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে কোটাপাড়া (পালং), বিলাসখান, মনোহর বাজার, রামভদ্রপুর (ভেদরগঞ্জ) মেলা বসে। মাঘ মাসে পন্ডিতসারে(নড়িয়া) রাম সাধুর মেলা বসে।
সংস্কৃতি
গ্রামীণ জীবনে পল্লী-গীতি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান গ্রাম ভিত্তিক হলেও এতে প্রাণবন্ত জীবনবোধ আছে। জারিগান, যাত্রা, কবিগান এ এলাকায় মাঝে মাঝে অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ফলে বিভিন্ন থানায় এমনকি গ্রামাঞ্চলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, একাঙ্কিকা প্রভৃতি মঞ্চায়িত হচ্ছে। একজন প্রখ্যাত নাট্যকারের নাটকের চেয়ে পুঁথি হতে বা প্রাচীন লোকগাঁথা ভিত্তিক কোন যাত্রা বা নাটক এখানকার জনসাধারণের মধ্যে অধিক রেখাপাত করে। রাজযাত্রা, রূপবান ও রহিম বাদশা প্রভৃতি লোকগাঁথার আবেদন এখানে প্রচুর। বিবাহের অনুষ্ঠানে এখানে মেয়েদের গানের পালা পড়ে যায়। রাতভর এরা গান গেয়ে আনন্দ উপভোগ করে।
খেলাধুলা
এ অঞ্চলের আদি খেলা হচ্ছে হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা, ষোলকড়ি, মার্বেল, মঙ্গলপাছা, উবান্তি বায়স্কোপ, বউ জামাই, লুকোচুরি, লুডু, পুতুল খেলা ইত্যাদি। ক্রমবিকাশের সাথে এ সকল খেলার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, দাবা, ক্যারাম প্রভৃতি খেলা। ক্রিকেট খেলা খুব হয় না এ অঞ্চলে। তবে সম্প্রতি শিশু কিশোরদের মধ্যে এ খেলা দেখা যায়। বিভিন্ন থানায় প্রতিযোগিতা ভিত্তিক ফুটবল, ভলিভল, হা-ডু-ডু ও ব্যাটমিন্টন খেলা হয়ে থাকে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যে লালিত যে প্রতিযোগিতা এখানেও পরিদৃষ্ট হয় তা হচ্ছে নৌকা বাইচ। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এখানে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতা হয়। পৌষ ও চৈত্র সংক্রান্তিতে পূর্বে এখানে ষাঁড়দৌড় হতো। ইদানিং এটা খুব একটা দেখা যায় না। ফুটবল খেলায় সারা ভারতবর্ষ ব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন এদেশের ভোজেশ্বরের এক সন্তান গোষ্ট পাল। ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ পদকে ভূষিত করেন। তিনিই সারা ভারতে প্রথম ফুটবলার যিনি এ পদকে ভূষিত হয়েছেন। আব্দুল মোতালেব সরদার কোলকাতার মোহামেডানের রাইট হাফে খেলতেন।
ওরস
সুরেশ্বরের পীর জনাব জান শরীফ এর মাজারে প্রতি বছর মাঘ মাসে শীতকালে ওরস হয়। ঢাকা, কুমিল্লা, বরিশাল জেলা হতে বহু মুরিদ এ ওরসে শরীক হয়।
মূলফৎগঞ্জ
মূলফৎগঞ্জ দরবার শরীফ এ প্রতি বছর পীর কেবলা হযরত বাবা মজিদ শাহ (রঃ) এর স্মৃতি সংরক্ষণ ও তাঁর রেখে যাওয়া মজিদিয়া তরিকার আশেকগণের চলার পথে সহায়তার জন্য প্রতি বছর শীতকালে ওরস হয়।
লাকার্তা
লাকার্তাপীর নওকড়ি শাহ জালালী’র স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর মুরিদগণ প্রতিবছর ৯ পৌষ লাকার্তা শিকদার বাড়ি ওরস করেন। ওরসে বহু মুরিদান অংশগ্রহণ করে থাকে।
খড়করা
প্রতি বছর কলিম উদ্দিন শা’র মাজারে ডিসেম্বরের পূর্ণিমায় ওরস হয়।
ডিঙ্গামানিক
বিখ্যাত সাধু রামঠাকুরের বাড়ি প্রতিবছর ২৭, ২৮ ও ২৯ মাঘ কীর্তন হয়। হিন্দু - মুসলমান উভয় ধর্মের লোকই এ কীর্তনে অংশ গ্রহণ করে থাকে।
পন্ডিতসারে খানকায়ে চিশতিয়া
প্রতি বছর ১১ পৌষ হতে তিন দিনের ওরস হয়। এ ছাড়া পয়লা জ্যৈষ্ঠ তারিখে হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ গোলাম মাওলা হোসায়নী চিশতী শামপুরী (রঃ) বা শ্যামপুরী হুজুর এর আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে রোজে মোকাদ্দস দিবস হিসাবে পালিত হয়।

[সম্পাদনা]চিত্তাকর্ষক স্থান

  • মগরঃ প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার অতুল প্রসাদ সেনের জন্মস্থান। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা । তাঁর রচিত অমর গান ‘‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’’।

  • মহিষারের দীঘিঃ দক্ষিণ বিক্রমপুরের এককালীন প্রখ্যাত স্থান। চাঁদ রায়, কেদার রায়ের নির্দেশে এখানে পানীয় জলের জন্য কয়েকটি দীঘি খনন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ হতে এখানে এক সপ্তাহের জন্য মেলা হয়। দিগম্বরী সন্ন্যাসীর মন্দিরও এখানে রয়েছে। সুপ্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক গঙ্গাচরণ ন্যায় রত্নের বাসস্থান।

  • রাজনগরঃ বৈদ্য প্রধান স্থান। ফরিদপুরের ইতিহাস লেখক আনন্দ চন্দ্র রায়, ঢাকার ইতিহাস লেখক যতীন্দ্র নাথ রায় ও ঢাকার বিশিষ্ট উকিল গুপ্ত এর জন্মস্থান। এখানকার অভয়া ও শিবলিঙ্গ বিখ্যাত।

  • কুরাশিঃ রাজা রাজবল্ল­ভের বংশধরগণের কেউ কেউ এখানে বাস করতেন বলে জানা যায়। বেশ কয়েকটি মন্দির ও শিবলিঙ্গ মূর্তি এখানে রয়েছে।

  • বুড়ির হাটের মসজিদঃ জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার বুড়ির হাট মসজিদটি খুবই বিখ্যাত এবং ইসলামী স্থাপত্যকলার নিদর্শন।

  • হাটুরিয়া জমিদার বাড়িঃ গোসাইরহাট উপজেলা।

  • রুদ্রকর মঠঃ দেড়শত বছরের পুরনো এই মঠটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই মঠটি দেখার জন্য বহু লোক আসে।

  • রাম সাধুর আশ্রমঃ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে শত বছরের পুরানো এই আশ্রমটি এই ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নই গোলক চন্দ্র সার্বভৌম ও শ্রীযুক্ত কালি কিশোর স্মৃতি রত্ন মহাশয়ের বাসস্থান। প্রতি বছর শীতের শেষে এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে তিন দিনের মেলা বসে। এ ছাড়াও ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের কার্তিকপুরের জমিদার বাড়ি বিখ্যাত।

  • জমিদার বাড়ীঃ শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত ছয়গাঁও ইউনিয়নে জমিদার বাড়ী অবস্থিত।

  • মানসিংহের বাড়ীঃ নড়িয়া উপজেলায় ফতেজংগপুর ঐতিহাসিক মানসিংহের দুর্গের ভগ্নাবশেষ রয়েছে।

  • শিবলিঙ্গঃ উপমহাদেশের শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে কষ্ঠিপাথরের সর্ববৃহৎ শিবলিঙ্গটি পাওয়া গেছে।

  • সুরেশ্বর দরবার শরীফঃ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরে মাওলানা জান শরীফের মাজার অবস্থিত। এখানে প্রতি বছর শীতের শেষে তিন দিনের ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং বহু ভক্তের সমাগম হয়।

  • পন্ডিতসারঃ এই স্থানে শ্যামপুরি হুজুরের মাজার শরীফ অবস্থিত। পৃথিবীর বহুস্থান থেকে এখানে লোক সমাগম হয়ে থাকে। প্রতি বছর ১১ পৌষ হতে তিন দিনের ওরস হয়। এ ছাড়া পহেলা জ্যৈষ্ঠ তারিখে হযরত শাহ্ সূফি সৈয়দ গোলাম মাওলা হোসায়নী চিশতী শ্যামপুরী (র:) বা শ্যামপুরী হুজুর এর আবির্ভাব দিবস হিসেবে রোজে মোকাদ্দাস দিবস হিসাবে পালিত হয়।

  • ধানুকার মনসা বাড়িঃ চন্দ্রমনি ন্যায়, ভুবন হরচন্দ্র চুড়ামনি ও মহোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত বামাচরণ ন্যায় প্রভৃতির জন্মস্থান ধানুকায়। এখানকার শ্যামমূর্তি জাগ্রত দেবতা বলে কিংবদন্তী রয়েছে।

[সম্পাদনা]

































































































 
Copyright 2009 বাংলাদেশ
Design by BloggerThemes