নদী
নদী (সমার্থক শব্দ - তটিনী, তরঙ্গিনী, সরিৎ ইত্যাদি) সাধারণত মিঠাপানির একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা মহাসাগর, হ্রদ, সাগর অথবা অন্য কোন নদীতে দিকে প্রবাহিত। মাঝে মাঝে অন্য কোন পানির উৎসের কাছে পৌছানোর আগেই নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। নদীকে তার গঠন অনুযায়ী শাখা নদী, উপ-নদী, প্রধান নদী, নদ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা যায়। আবার ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ছোট নদীকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
পরিচ্ছেদসমূহ
১ নদ ও নদী
২ শাখা নদী, উপ-নদী
৩ বাংলাদেশের নদ-নদী
৪ জীবন ও জীবিকায় নদীর ভূমিকা
৫ যানবাহন
৬ সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীতে নদী
৭ বাংলাদেশের নদীর তালিকা
৮ অন্যান্য নদী
নদ ও নদী
গুয়াহাটির শুক্লেশ্বর ঘাট থেকে ব্ৰহ্মপুত্রের দৃশ্য
যে জলস্রোত কোন পর্ত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন ও বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোন জলাশয়ে পতিত হয়, তাকে নদী বলে। যেমনঃ মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি। যখন কোন নদী হতে কোন শাখা নদীর সৃষ্টি হয়না, তখন তাকে বলা হয় নদ। যেমনঃ কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র, নীল নদ ইত্যাদি নদ। সুরমা, গঙ্গা, বুড়িগঙ্গা ইত্যাদি নদী।
শাখা নদী, উপ-নদী
প্রধান নদী সাধারণত নদী ব্যতিত অন্য কোন উৎস হতে সৃষ্টি হয়, যেমন পদ্মা গঙ্গোত্রী হিমবাহ হতে উৎপন্ন হয়েছে। শাখা নদী অন্য কোন নদী হতে উৎপন্ন হয়। যেমন বুড়িগঙ্গা ধলেশ্বরীর শাখা নদী। উপ-নদী সাধারণত অন্য কোন নদীতে গিয়ে মেশে, যেমন আত্রাই নদী। কোন প্রধান নদী অন্য নদীর উপ-নদীও হতে পারে। বাংলাদেশের বহ্মপুত্র, কিংবা আফ্রিকার নীল এক ধরণের নদ।
বাংলাদেশের নদ-নদী
বাংলাদেশে ছোট-বড় সাত শতাধিক নদী আছে। তন্মধ্যে কিছু নদী মৃতপ্রায়। বর্ষাকালে নদীগুলো বেশ সজীব, জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। তখন নদীর ভরাযৌবন দেখা যায়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী ইত্যাদি এ দেশের প্রধান নদী।
জীবন ও জীবিকায় নদীর ভূমিকা
নদীকে ঘিরেই বিশ্বের প্রতিটি শহর, বন্দর, গঞ্জ, বাজার প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। মালামাল পরিবহণ ও যোগাযোগের সহজ উপায় হলো নৌকা। মালামাল পরিবহণে খুবই স্বল্প খরচে নৌকার জুড়ি মেলা ভার। যিনি নৌকা চালান তিনি মাঝি হিসেবে চিহ্নিত। একসময় নৌকায় পাল তোলা থাকত। সময়ের বিবর্তনে এর স্থান দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। মাঝ নদীতে জেলেরা উত্তাল তরঙ্গের সাথে যুদ্ধ করে মাছ আহরণ করে। নদী পাড়াপাড়ে ইজারাদার কর্তৃক কর হিসেবে অর্থ আদায় করতে দেখা যায়।
যানবাহন
নৌকা ও নদী - একে-অপরের পরিপূরক। নদীতে মূলতঃ নৌকা চললেও লঞ্চ, স্টিমার, স্পীডবোট, ট্রলার ইত্যাদির দেখা পাওয়া যায়।
সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীতে নদী
বাংলা সাহিত্যে নদী গুরুত্বপূর্ স্থান দখল করে আছে। তন্মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পদ্মা নদীর মাঝি অন্যতম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুজন-সখী’র গান হিসেবে ‘সব সখীরে পাড় করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলা নেব সখী’ - প্রেমের গানটি তৎকালীন সময়ে সকলের মুখে মুখে ছিল। সঙ্গীত জগতে ‘নদী’ গুরুত্বপূর্ চরিত্র হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। মান্নাদে’র এ নদী এমন নদী; জগজিৎ সিংয়ের ‘নদীতে তুফান এলে বুক ভেঙ্গে যায়’ কিংবা আরতী মুখোপাধ্যায়ের ‘নদীর যেমন ঝরনা আছে, ঝরনারও নদী আছে’ ইত্যাদি অমর সঙ্গীত হিসেবে টিকে থাকবে আজীবন। এছাড়াও, মোহনায় এসে নদী পিছনের পথটাকি ভুলতে পারে - গানটি বেশ জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের নদীর তালিকা:
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকাই শত শত নদীর মাধ্যমে বয়ে আসা পলি মাটি জমে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীসমূহের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলঃ
নদীর নাম দৈর্ঘ্য (কি.মি.) প্রবাহিত এলাকা ও দৈর্ঘ্য
আড়িয়াল খাঁ ১৬০ কি.মি. ফরিদপুর , বরিশাল
বংশী (নদী) ২৩৮ কি.মি. ময়মনসিংহ , ঢাকা
বেতনা-খোলপটুয়া ১৯১ কি.মি. যশোর ,খুলনা
ভদ্রা ১৯৩ কি.মি যশোর (৫৮) খুলনা
ভৈরব নদী ২৫০ কি.মি যশোর, খুলনা
কংস (নদী) ২২৫ কি.মি ময়মনসিংহ
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা(যমুনা ) ২৭৬ কি.মি রংপুর পাবনা
বুড়িগঙ্গা ০২৭ কি.মি ঢাকা
চিত্রা ১৭০ কি.মি কুষ্টিয়া, যশোর
ডাকাতিয়া ২০৭ কি.মি কুমিল্লা ,নোয়াখালী
ধলেশ্বরী নদী ১৬০ কি.মি ময়মনসিংহ, ঢাকা
ধনু (নদী)-বাউলাই-ঘোড়াউত্রা ১৩৫ কি.মি ময়মনসিংহ , সিলেট
দোনাই-চরলকাতা- ৪৫০ কি.মি রংপুর , বগুড়া , পাবনা
যমুনেশ্বরী-করতোয়া
গঙ্গা-পদ্মা (গঙ্গা , পদ্মা ) ৩৭৮ কি.মি রাজশাহী , পাবনা , ঢাকা ও ফরিদপুর
গড়াই-মধুমতি নদী-বলেশ্বর্ ৩৭১ কি.মি কুষ্টিয়া , ফরিদপুর , যশোর , খুলনা , বরিশাল
ঘঘট ২৩৬ কি.মি রংপুর
করতোয়া-আত্রাই-গুর- ৫৯৭ কি.মি দিনাজপুর, রাজশাহী , পাবনা
গুর-গুমানি-হুরাসাগর
কর্ণফুলী নদী ১৮০ কি.মি পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম
কোবাডাক্ ২৬০ কি.মি যশোর ,খুলনা
কুমার নদী ১৬২ কি.মি যশোর, ফরিদপুর
কুশিয়ারা ২২৮ কি.মি সিলেট
ফেনী নদী-ডাকাতিয়া ১৯৫ কি.মি নোয়াখালী ,কুমিল্লা
নিম্ন মেঘনা ১৬০ কি.মি চাঁদপুর থেকে বঙ্গোপসাগর
মাতামুহুরি ২৮৭ কি.মি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম
মাথাভাঙা ১৫৬ কি.মি রাজশাহী , কুষ্টিয়া
নবগঙ্গা ২৩০ কি.মি কুষ্টিয়া , যশোর
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ২৭৬ কি.মি ময়মনসিংহ
পুনর্ভবা ১৬০ কি.মি দিনাজপুর ,রাজশাহী
রূপসা-পশুর ১৪১ কি.মি খুলনা
সাংগু ১৭৩ কি.মি চট্টগ্রাম , পার্বত্য চট্টগ্রাম
সুরমা নদী-মেঘনা নদী ৬৭০ কি.মি সিলেট , কুমিল্লা , বরিশাল
তিস্তা নদী ১১৫ কি.মি রংপুর
অন্যান্য নদী
নদীর নাম:
কপোতাক্ষ নদকরতোয়া নদ
কাঁকন নদী
কীর্তনখোলা নদী
কুশিয়ারা নদী
খোয়াই নদী
আত্রাই নদী
গড়াই নদী
চিত্রা নদী
জলঢাকা নদী
ডাকাতিয়া নদী
তিতাস নদী
তুরাগ নদী
ধানসিঁড়ি নদী
নাফ নদী
পশুর নদী
পাহাড়ীয়া নদী
পুণর্ভবা নদী
ফেনী নদী
বড়াল নদী
বাঙালি নদী
বালু নদী
বিরিশিরি নদী
মধুমতী নদী
মনু নদী
মহানন্দা নদী
ময়ূর নদী
মাতামুহুরী নদী
মুহুরী নদী
যমুনা নদী
রূপসা নদী
শঙ্খ নদী
শিবসা নদী
শীতলক্ষা নদী
সাঙ্গু নদী
সুরমা নদী
হালদা নদী
তথ্যসূত্র
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে