সিলেট জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। সিলেট বাংলাদেশের উওর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ । বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জেরসারি সারি পাথরের স্তূপ পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। এ জেলার বিশাল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সিলেটের পাথর, বালির গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জেলার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে যা সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম। জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান। ১৭৬৭ সালে এ অঞ্চল ব্রিটিশদের করায়ত্ত হবার পর ১৭৭২ সালে সিলেট জেলার সৃষ্টি হয় এবং প্রথম কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান মিঃ উইলিয়াম থ্যাকারে। কালের প্রবাহে ১২(বার)টি উপজেলা নিয়ে বর্তমান সিলেট জেলা গঠিত। [১] ঔপনিবেশিক আমলেই সিলেট দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। সিলেট পৌরসভা সৃষ্টি ১৮৭৮ সালে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা শহরটিকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে ধ্বংসস্ত্তপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়। ১৯১২-১৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার প্রকৃত অবসান ঘটে। চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটীদের এবং সিলেট শহর দ্রুত নগরায়ণ ঘটতে থাকে এবং বর্তমানে ও তা অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট জেলা | |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
স্থানাঙ্ক | 24.92° N 91.77° E |
আয়তন | ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি |
সময় স্থান | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
জনসংখ্যা (১৯৯১) - ঘণত্ব - শিক্ষার হার | ২৫৬৯৭৮৩ - ৭৩৬.২৪/কিমি² - ৪৪.৫% |
ওয়েবসাইট: বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ | |
মানচিত্র সংযোগ: সিলেট জেলার প্রাতিষ্ঠানিক মানচিত্র | |
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো]
|
ভৌগোলিক সীমানা
সিলেট জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪০ ৪০’ থেকে ২৫০ ১১’’ উত্তর অক্ষাংশ ৯১০ ৩৮’’ থেকে ৯২০ ৩০’’ দ্রাঘিমাংশ। সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় ও খাশিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়, পূ্র্বে ভারতের আসাম, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। বাৎসরিক সর্বচ্চো তাপমাত্রা ৩৩.২° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬° সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিলিমিটার। প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। হাওড় সংখ্যা ৮২ টি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২৩৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া-জয়ান্তা পাহারের কিছু অংশ এই জেলায় পরেছে। এছাড়াঅ কিছু ছোট পাহার ও টিলা রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জৈন্তাপুর (৫৪ মাইল), সারি টিলা (৯২ মাইল), লালখান টিলা (১৩৫ মাইল), ঢাকা দক্ষিণ টিলাসমুহ (৭৭.৭ মাইল)। [২]
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারী সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অর্ন্তভূক্ত। ঐ বছরেরই ১২ সেপ্টেম্বর নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত (১৯৫০-১৯১১ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামে,র অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভিক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তভূক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ০৪(চার)টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়। [৩]
সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা গুলো হল:
- বালাগঞ্জ উপজেলা
- বিয়ানীবাজার উপজেলা
- বিশ্বনাথ উপজেলা
- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা
- ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা
- গোলাপগঞ্জ উপজেলা
- গোয়াইঘাট উপজেলা
- জৈন্তাপুর উপজেলা
- কানাইঘাট উপজেলা
- সিলেট সদর উপজেলা
- জকিগঞ্জ উপজেলা
- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা
এছাড়াও এই জেলার ১৩ টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১০১টি ইউনিয়ন, ১৬৯৩টি মৌজা, ৩৪৯৭ টি গ্রাম, ৪৯২৮৩৩ টি পরিবার রয়েছে।
ইতিহাস
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: সিলেট বিভাগ সিলেটের আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে এই অঞ্চলের প্রাচীন সীমানার যে উল্লেখ পাওয়া যায় সে অনুসারে তৎকালীন শ্রীহট্টমণ্ডল বর্তমান সিলেট বিভাগের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় ছিল, এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান সরাইল বা সতরখণ্ডল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত), জোয়ানশাহী (বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত), ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অনেকাংশ শ্রীহট্টের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৪] প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থকামাখ্যা তন্ত্র অনুযায়ী প্রাচীন কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমাই প্রাচীন শ্রীহট্ট ছিল অর্থাৎ শ্রীহট্ট ছিল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত। যোগিনী তন্ত্রে শ্রীহট্টের সীমার বিবরণ এরকম:
- পূর্ব্বে স্বর্ণ নদীশ্চৈব দক্ষিণে চন্দ্রশেখর
- লোহিত পশ্চিমে ভাগে উত্তরেচ নীলাচল
- এতন্মধ্যে মহাদেব শ্রীহট্ট নামো নামতা।
অতপর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তি সময়ে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক রুপরেখার বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে সিলেট বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ ত্রিপুরা রাজ্যের আধিকার্ভুক্ত এবং দক্ষিন-পশ্চিমের অনেক অংশ হারিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশিষ্টাংশে শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজ্য জয়ন্তীয়া, লাউড় ও গৌড় বিস্তৃত ছিল। [৫] দশম শতাব্দীতে মহারাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক উৎকীর্ণ পশ্চিমবাগ তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি সিলেট জয় করেছিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা, সিলেট বা শ্রীহট্ট(সমঋদ্ধ হাট) বহু আগে থেকেই একটি বর্ধিষ্ণু বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্তমান ছিল। প্রাচীন শ্রীহট্টে বিপুল হারে বাঙালি অভিবাসন হয়েছিল। ১৪ শতকে ইয়েমেনের সাধক পুরুষ হযরত শাহ জালাল (রাঃ) সিলেট জয় করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরু করেন। মুগল যুগে পাঠান বীর খাজা ওসমান সিলেটের স্থানীয় সামন্তদের সহায়তায় আক্রমণকারী যুগলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সুলতানী আমলে সিলেটের নাম ছিল জালালাবাদ। ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের সময়ে সিলেটে বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়। নানকার বিদ্রোহ সিলেটের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নানকাররা ছিল জমিদারদের ভূমিদাস। নানাকার বিদ্রোহ সহ আরও কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ১০৫০ সালে এ প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। [৬]
সিলেট নামের উৎপত্তি
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলের (সিলেট বিভাগ) বিভিন্ন নামের উল্লেখ আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতি দেবীর কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে 'শ্রী হস্ত' হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম "সিরিওট" বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (Ailien) বিবরণে "সিরটে", এবং পেরিপ্লাস অব দ্যা এরিথ্রিয়ান সীনামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম "সিরটে" এবং "সিসটে" এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে। অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম "শিলিচতল" উল্লেখ করেছেন[৭]। তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাঁদের দলিলপত্রে "শ্রীহট্ট" নামের পরিবর্তে "সিলাহেট", "সিলহেট" ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। [৮][৯]
এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তির একটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবং এর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়।
অর্থনীতি
সিলেট একটি প্রবাসীবহুল জনপদ। যুক্ররাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিলেট বিভাগের মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই বিভাগের প্রধান উত্স[১০][২]। এছাড়া পাহাড়ে ও প্রান্তরে বেড়ে ওঠা কৃষি ব্যবস্থাপনা যেমন; চা, ধান, মাছ, কমলা, লেবু, আনারস, বাশঁ, আম, ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষের অনন্য অবলম্বন[৩] এছাড়া সিলেট পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। পর্যটন খাত থেকেও প্রচুর মুদ্রা অর্জন করে সিলেট।
সরকারী ভাবে সিলেটে দুইটি বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে।
১। খাদিম নগর শিল্প নগরী
২। গোটাটিকর শিল্প নগরী।
১। খাদিম নগর শিল্প নগরী
২। গোটাটিকর শিল্প নগরী।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- শিক্ষার হার ৪৫.৫৯%।
শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেট বাংলাদেশের একটি অগ্রসর অঞ্চল।
- জুনিয়র হাইস্কুল - ৩৭ টি। মাধ্যমিক হাইস্কুল (সরকারী) - ৬ টি। বেসরকারী মাধ্যমিক হাইস্কুল - ২৮৫ টি।
- মাদ্রাসাঃ (দাখিল) ৮৭ টি। আলিম- ২৩টি। ফাজিল - ১০ টি। কামিল - ৮ টি।
- উচ্চ মাধ্যমিক কলেজঃ (সরকারী) - ২ টি। বে-সরকারী ২০টি।
- ডিগ্রি কলেজঃ (সরকারী)- ২টি। বেসরকারী -১৮। অনার্স (সরকারী) - ১টি। মাষ্টার্স (সরকারী) - ১টি। মাষ্টার্স বেসরকারী - ১টি।
এছাড়া সিলেটে রয়েছে ২টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় (১টি কৃষি)।
৪টি বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
৪টি মেডিকেল কলেজ।
২ টি টিচার্স ট্রেনিং ১টি পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।
১টি ইমাম ট্রেনিং একাডেমী।
- উল্লেখযোগ্য বিশ্ব্ববিদ্যালয় ও কলেজের নাম -
- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
- লিডিং ইউনিভার্সিটি
- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
- দারুল আহসান বিশ্ববিদ্যালয়
- সিলেট ইন্জিনিয়ারিং কলেজ
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড
সিলেটে বেশ কিছু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ"েছ- সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট মোবাইল পাঠাগার, বাংলাদেশ সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র ইত্যাদি।
ভাষা ও সংস্কৃতি
ভাষা
ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং ভাষার পরিবর্তন হয় এলাকা ভিত্তিক এবং দুরত্বের উপর নির্ভর করে। সিলেটিদের কথ্য ভাষা প্রকৃত বাংলা ভাষা হতে বেশ আলাদা। সিলেট ঐতিহাসিক ভাবেই আলাদা ভাষা এবং আলাদা সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে আসছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস যার ফলে ভাষার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র্য। পূর্বে সিলেট আসাম রাজ্যের অন্তর্গত থাকার ফলে সিলেটের ভাষা ও সংস্কৃতিতে আসামের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও সিলেটের রয়েছে এক বৈচিত্র্যময় নিজস্ব ভাষা যা নাগরী লিপি হিসাবে পরিচিত।
সিলেটের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বলতম দলিল নাগরী লিপি। ড: সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীকে নাগরী লিপির প্রচলন কাল বলে মত প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে মোঘলদের দ্বারা তাড়িত হয়ে সিলেটে আগত আফগান পাঠানরা এর সৃষ্টি করেন। এ ব্যাপারে আরেকটি মত চালু রয়েছে। সেটি হল-ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ সৃষ্ট সংস্কৃত বহুল বাংলার বিকল্প রুপে সিলেটীরা এই লিপি ও সাহিত্যের জন্ম দেন। এই রীতিতেই রচিত তৎকালীন উন্নত সাহিত্য। সিলেটের আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষার রয়েছে বিজ্ঞান সম্মত লিপি মালা। গবেষক ও ভাষা বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপুর্ন। নাগরীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-এটি সিলেট অঞ্চলের মুসলমানদের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। নাগরীর অক্ষর মাত্র ৩২টি। যুক্ত বর্ণ সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। মাত্র আড়াই দিনে শেখা যায়। তাই মহিলাদের মধ্যে নাগরীর প্রচার ও প্রসার ছিল বেশী। এখনো অনেক মহিলা নাগরী জানেন। নাগরীতে রচিত পুঁথি পুস্তকের বিষয়বস্ত্ত প্রধানত নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইসলামী ইতিহাস, ঐতিহ্য, কাহিনী এবং রাগ, বাউল ও মরমী সঙ্গীত। এ পর্যন্ত ৮৮টি মুদ্রিত গ্রন্থসহ(নাগরী হরফে) ১৪০টি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘সিলেটী নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ সম্পর্কে গবেষণা করে জনাব গোলাম কাদির ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। নাগরী সাহিত্যে ছাদেক আলী সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি। তিনি ১৭৯৮ সালে কুলাউড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল গৌর কিশোর সেন। ১৮২৩ সালে তিনি মৌলভীবাজারের মুনসেফ ছিলেন।
নাগরী পুঁথি রচয়িতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত মুন্সী ইরপান আলী,দৈখুরা মুন্সী, আব্দুল ওহাব চৌধুরী, আমান উল্যা, ওয়াজি উল্যা, শাহ হরমুজ আলী, হাজী ইয়াছিনসহ ৫৬ জনের পরিচিতি পাওয়া গেছে। গোলাম হুসনের লিখিত ‘তালিব হুসন'কে প্রথম গ্রন্থ রুপে ধরে নেওয়া হয়। নাগরী লিপিতে সাহিত্য সৃষ্টির অনেক পর এর মুদ্রণ শুরু হয়। টাইপ ও ছাপা খানার অভাবে হাতে লিখেই নাগরীর প্রসার ঘটে। এ সময় সিলেট শহরের হাওয়াপাড়া নিবাসী মৌলভী আব্দুল করিম ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফেরেন। নাগরী লিপির টাইপ তৈরি করে চালু করেন ছাপা খানা। বন্দর বাজারে স্থাপিত ঐ প্রেসের নাম ছিল ইসলামিয়া প্রেস। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেসটি বোমায় পুড়ে যায়। সিলেট শহরের নাইওরপুলে ছিল সারদা প্রিন্টিং পাবলিশিং। ১৯৪৭ পূর্ববর্তীকালে কলকাতা ও শিয়ালদহেও নাগরী লিপির প্রেস ছিল। বৃহত্তর সিলেট, কাছাড়, করিমগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় নাগরী লিপি ও সাহিত্যের প্রচার ও সমাদর ছিল।
মণিপুরী নৃত্যকলা
মণিপুরী সংস্কৃতির সমৃদ্ধতম শাখা হলো নৃত্যকলা। মুণিপুরী ধর্মমতে মানব ও পৃথিবী সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই নৃত্যের শুরু।
নৃত্যের মণিপুরী প্রতিশব্দ হলো-জাগোই। বিশেষজ্ঞদের মতে-চৎনা চৎনা কোয়বা-হেঁটে হেঁটে বৃত্ত সৃষ্টি করা থেকে চকোয় যা পরিবর্তিত হয়ে জগোই শব্দের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। আবার অনেকের মতে, এই জাগোই শব্দের উৎপত্তি সঙস্কৃত চক্র শব্দ থেকে। আর তাই মণিপুরী নৃত্যের দৈহিক গতিই বৃত্ত বা অর্ধবৃত্ত রচনা করে যা গোলাকৃতির মণিপুর উপত্যকা বা বৃহত্তর অর্থে পৃথিবী ও বিশ্বসৃষ্টির প্রতীক।
মনিপুরী নৃত্যের আদিরূপ লাই হারাওবা নৃত্য। লাই অর্থ দেবতা, হারাওবা অর্থ আনন্দ। অর্থাৎ দেবতাদের আনন্দ বিনোদনের জন্য নৃত্য পরিবেশনা।
বর্তমানে প্রচলিত লাই হারাওবা নৃত্যে চারটি প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলো হলো কংলৈ হারাওবা, মোইরাং হারাওবা, চকপা হারাওবা ও ককচিং হারাওবা । লাই ঈকৌবা বা দেবতার উদ্ধোধন দিয়ে শুরু লাই হারাওবা নৃত্য। তারপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে লৈশেম জগোই (পৃথিদবী সৃষ্টির নৃত্য), লৈনেৎ জগোই (সমতল ভূমির সৃষ্টির নৃত্য), লৈতা জগোই (বসতি স্থাপনের নৃত্য), লৈমা জাগোই (কুমারী নৃত্য)। তারপর ধীরে ধীরে গৃহমনর্মাণ, কাপড় বোনা, শস্যরোপন, শিকার, বিভিন্ন ক্রীড়াকৌশল, সমস্ত কিছুই পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে।
বর্তমানে প্রচলিত লাই হারাওবা নৃত্যে চারটি প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলো হলো কংলৈ হারাওবা, মোইরাং হারাওবা, চকপা হারাওবা ও ককচিং হারাওবা । লাই ঈকৌবা বা দেবতার উদ্ধোধন দিয়ে শুরু লাই হারাওবা নৃত্য। তারপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে লৈশেম জগোই (পৃথিদবী সৃষ্টির নৃত্য), লৈনেৎ জগোই (সমতল ভূমির সৃষ্টির নৃত্য), লৈতা জগোই (বসতি স্থাপনের নৃত্য), লৈমা জাগোই (কুমারী নৃত্য)। তারপর ধীরে ধীরে গৃহমনর্মাণ, কাপড় বোনা, শস্যরোপন, শিকার, বিভিন্ন ক্রীড়াকৌশল, সমস্ত কিছুই পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে।
তাই ঐতিহাসিক Saraj Nalini Parrott বলেছেন, The Lai Haroba mirrors the entire culture of the Manipuri People.
লাই হারাওবা নৃত্য একটি লোকনৃত্য কিন্তু ধ্রুপদী নৃত্যের শৃংখলা এতে সুষ্পষ্ট। বস্তুতঃ এই নৃত্য ধ্রুপদী নৃত্যের অন্কুর বিশেষ। এই নৃত্যে নানাপ্রকার লৌকিক হস্তমুদ্রা ব্যবহ্নত হয়। তান্ত্র্রিক হস্তমুদ্রার সাথে সাদৃশ্য লক্ষণীয়। পরবর্তীকালে লাই হারাওবা নৃত্যই পরিশোধিত-পরিমার্জিত হয়ে রূপ নিয়েছে ধ্রুপদী নৃত্যের। মণিপুরে বৈষ্ণব সংস্কৃতির প্রসারের পর থেকে এই নৃত্য রাসনৃত্যের অন্যতম উপাদান ভঙ্গি পারেং-এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। [১১]
পত্র পত্রিকা
দৈনিক শ্যামল সিলেট, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদ,দৈনিক সিলেট সংলাপ, দৈনিক যুগভেরী, দৈনিক সিলেট বানীসহ বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা সিলেট থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাপ্তাহিক, মাসিক ও সাময়িক পত্র পত্রিকা সিলেট থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে।
চিত্তাকর্ষক স্থান ও পর্যটন আকর্ষণ
হযরত শাহজালাল (রাঃ) ও হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। সিলেট এর স্থানীয় ভাষা ‘‘নাগরী ভাষা’’র একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক। শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর-বাওর গুলো ভরে উঠে অতিথি পাখির কলরবে।
- জাফলং
- ভোলাগঞ্জ
- লালাখাল
- তামাবিল
- হাকালুকি হাওড়
- ক্বীন ব্রীজ
- হযরত শাহজালাল(রাঃ) ও হযরত শাহ পরাণ(রাঃ) এর মাজার শরীফ
- মহাপ্রভু শ্রী চৈত্যনো দেবের বাড়ী
- হাছন রাজার মিউজিয়াম
- মালনী ছড়া চা বাগান
- এম. এ. জি. ওসমানী বিমানবন্দর
- পর্যটন মোটেল।
- জাকারিয়া সিটি
- ড্রিমল্যান্ড পার্ক
- আলী আমজাদের ঘড়ি
- জিতু মিয়ার বাড়ী
- মনিপুরী রাজবাড়ি।
- মনিপুরী মিউজিয়াম
- শাহী ঈদগাহ
- ওসমানী শিশু পার্ক
- মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
- সৈয়দপুর গ্রাম
- সিলেটী নাগরী লিপি
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- এম সাইফুর রহমান (১৯৩২- ২০০৯)
- জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী
- আবুল মাল আব্দুল মুহিত
- নুরুল ইসলাম নাহিদ
- ডঃ তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধূরী
- বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব (১৯০৭-১৯৭১)
- কবি প্যারীচরন দাস-(১৮৫০-১৮৯০)
- ইফতেখার আহমদ চৌধুরী
- সুহাসিনী দাস
- খান বাহাদুর এহিয়া চৌধুরী -(১৮৫১-১৯২৫)
- হেনা দাস
- জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ)আবদুল মালিক
- শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৫-১৫৩৩)
- আবদুল ওহাব চৌধুরী (১৭৬৩-১৮৮৮)
- শীতালং শাহ (১৮০৬-১৮৯৯)
- রাজা গিরিশচন্দ্র রায় (১৮৪৫-১৯০৮)
- শরচ্চন্দ্র চৌধুরী (১৮৫১-১৯২৭)
- হাফিজ মোহাম্মদ হাতিম চৌধুরী (১৮৫৫-১৯২৫)
- বাধানাথ চৌধুরী (১৮৫৬-১৯৯২)
- সুন্দরীমোহন দাস (১৮৫৭-১৯৫০)
- মৌলভী আবদুল করিম (১৮৬৩-১৯৪৩)
- অচ্যুতচরণ চৌধুরী (১৮৬৫-১৯৫৩)
- আর্জুমন্দ আলী (১৮৭০-১৯৪১)
- সৈয়দ আবদুল মজিদ (১৮৭২-১৯২২)
- গজনফর আলী খান (১৮৭২-১৯৫৯)
- আরকুম শাহ (১৮৭৭-১৯৪১)
- গুরম্নসদয় দত্ত (১৮৮২-১৯৪১)
- যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য (১৯০৫-১৯৯০)
- আবদুল গফ্ফার চৌধুরী (১৯১২-১৯৬৬)
- আব্দুর রহমান খান
- আলী আমজাদ খা-(১৮৬৯-১৯৫০)
- রাধা রমন দত্ত-(১৮৩৬-১৯১১)
- মাওলানা ওবায়দুল হক
- শাহ আবদুল করিম ((১৯১৬- ২০০৯)