ঠাকুরগাঁ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
প্রশাসনিক বিভাগ | রংপুর |
আয়তন (বর্গ কিমি) | ১,৮০৯ |
জনসংখ্যা | মোট: ১১,৯৬,৪২৯ পুরুষ: ৫১.০৪% মহিলা: ৪৮.৯৬% |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: | বিশ্ববিদ্যালয়: ০ কলেজ : ২৭ মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ২৪১ মাদ্রাসা : ৭৪ |
শিক্ষার হার | ২৭.৩ % |
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব | রাজা টংক নাথ |
প্রধান শস্য | ধান, গম, আখ |
রপ্তানী পণ্য | ধান, চাল, আম |
Thakurgaon | |
---|---|
— District — | |
Location of Thakurgaon in Bangladesh | |
Coordinates: 25.95°N 88.25°ECoordinates: 25.95°N 88.25°E | |
Country | Bangladesh |
Division | Rangpur Division |
Area | |
• Total | 1,809.52 km2(698.66 sq mi) |
Population (1991) | |
• Total | 1,196,429 |
• Density | 660/km2 (1,700/sq mi) |
Literacy rate | |
• Total | 100.3% |
Time zone | BST (UTC+6) |
• Summer (DST) | BDST (UTC+7) |
Postal code | 5100 |
Website | Banglapedia Article |
[সম্পাদনা]ভৌগোলিক সীমানা
ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তরে পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত।
[সম্পাদনা]প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
ঠাকুরগাঁও জেলা পাঁচটি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে
[সম্পাদনা]ইতিহাস
টাঙ্গন, শুক ও সেনায়া বিধৌত এই জনপদের একটি ঠাকুর পরিবারের উদ্যোগে বৃটিশ শাসনমলে বর্তমান পৌরসভা এলাকার কাছাকাছি কোনো স্হানে একটি থানা স্হাপিত হয়। এই পরিবারের নাম অনুসারে থানাটির নাম হয় ঠাকুরগাঁও থানা। "ঠাকুর" অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের সংখ্যাধিক্যের কারণে স্হানটির নাম ঠাকুরগাঁও হয়েছে। ১৮৬০ সালে এটি মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হয়। এর অধীনে ছয়টি থানা ছিল, এগুলো হলঃ ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর ও আটোয়ারী। ১৯৪৭ সালে এই ৬টি থানা এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ৩টি থানা ও কোচবিহারের ১টি থানা (পঞ্চগড়, বোদা, তেতুলিয়া ও দেবীগঞ্জ) নিয়ে ১০টি থানার মহকুমা হিসেবে ঠাকুরগাঁও নুতনভাবে যাত্রা শুরু করে। কিন্ত ১৯৮১ সালে আটোয়ারী, পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেতুলিয়া নিয়ে পঞ্চগড় নামে আলাদা মহকুমা সৃষ্টি হলে ঠাকুরগাঁও মহকুমার ভৌগোলিক সীমানা ৫টি থানায় সংকুচিত হয়ে যায়। থানাগুলি হচ্ছেঃ ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী ঠাকুরগাঁও মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
ছোট জেলা হলেও ঠাকুরগাঁও প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ একটি জনপদ। এখানে যেমন উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর (সাঁওতাল ও উরাও) মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, তেমনিভাবে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান শাসনামলে বিভিন্নমুখি পরিবর্তনের ছোয়ায় পালাবদলের প্রক্রিয়া চলেছে। জেলার নেকমরদ, রাণীশংকৈল এসব স্হানে সুপ্রাচীন সভ্যতার নির্দশন বিদ্যমান।
অতীত এবং বর্তমান বিচারে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে ঠাকুরগাঁও একটি সমৃদ্ধ জেলা। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বরেন্দ্র ভূমির অন্যান্য জেলার মতই এই জেলার মানুষ ক্রমান্বয়ে উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্যা এবং উন্নয়নের অন্যান্য সুফল লাভে সক্ষম হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে যোগসূত্র স্হাপন করে সকল সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাগীদার হয়েছে এবং নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
[সম্পাদনা]অর্থনীতি
[সম্পাদনা]চিত্তাকর্ষক স্থান
জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিমান বন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জহাট। হাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ।
বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ প্রায় ২০০ বছরের পুরনো সূর্য্যপূরী আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভারতের সীমান্তবর্তী হরিণ মারি গ্রামে অবস্থিত। গাছটি প্রায় ২.৫ বিঘা জমির উপর বিস্তৃত। গাছটির শাখা-প্রশাখা অশ্বহ্থ গাছের মত মাটির দিকে ঝুঁকে পরার প্রবনতা লক্ষ করা যায়। এটিকে এশিয়া মহাদেশের সর্ববহৎ আমগাছ বলা যায়।
ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এন্ড ট্যুরিজম লিঃ, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও অবস্থান: পৌর ভবনের বিপরীতে, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও। আয়তন: ১০ একর।
রাজভিটা পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের হাটপাড়া নামক স্থানে টাঙ্গন নদীর বাঁকে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে যে রাজবাড়ির অস্তিত্ব অনুভব করা যায় তা রাজভিটা নামে বর্তমান মানুষের নিকট পরিচিত।
রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি রানীশংকৈল উপজেলার পূর্বপ্রান্তে কুলিক নদীর তীরে মালদুয়ার জমিদার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি।
হরিপুর রাজবাড়ি হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে হরিপুর রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ি ঘনশ্যাম কুন্ডুর বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
জগদল রাজবাড়ি রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে জগদল নামক স্থানে নাগর ও তীরনই নদীর মিলনস্থলে ছোট একটি রাজবাড়ি রয়েছে।
প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ রানীশংকৈল উপজেলার ভবানন্দপুর
নেকমরদ মাজার রানীশংকৈল উপজেলা থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার উত্তরে নেকমরদ স্থানটি। এলাকাটির মূল নাম হচ্ছে ভবানন্দপুর। আজও নেকমরদকে মৌজা হিসেবে ভবানন্দপুর লেখা হয়। শেখ নাসির-উদ-দীন নামক এক পূণ্যবান ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভবানন্দপুর আসেন। তিনিই পীর শাহ নেকমরদ নামে খ্যাতিমান এবং এই খ্যাতিমান পুণ্যাত্মা পুরুষের কারণেই ভবানন্দপুর পরবর্তীকালে নেকমরদ নামে পরিচিতি লাভ করে।
মহেশপুর মহালবাড়ি ও বিশবাঁশ মাজার ও মসজিদস্থল ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলা হতে উত্তরে মীরডাঙ্গী থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে মহেশপুর গ্রামে মহালবাড়ি মসজিদটি অবস্থিত।
শালবাড়ি মসজিদের ইমামবাড়া ঠাকুরগাঁও উপজেলার পশ্চিমে ভাউলারহাটের নিকটে শালবনে শালবাড়ি মসজিদটি অবস্থিত।
সনগাঁ মসজিদ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কালমেঘ হাট থেকে দু কিলোমিটার উত্তরে সনগাঁ নামক গ্রামে সনগাঁ মসজিদটি নির্মিত।
ফতেহপুর মসজিদ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে মোড়লহাটের সন্নিকটে ফতেহপুর মসজিদ।
মেদিনী সাগর মসজিদ ও মসজিদের মেহরাব হরিপুর উপজেলার উত্তরে মেদিনীসাগর গ্রামে মেদিনীসাগর জামে মসজিদটি অবস্থিত।
ধবংসপ্রাপ্ত গেদুড়া মসজিদ হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নে গেদুড়া মসজিদটি প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে স্থাপিত হয়। বর্তমানে পুরাতন মসজিদটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। একইস্থানে নতুন মসজিদ তৈরি হয়েছে। এখানে আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত গোলাকার একটি শিলালিপি পাওয়া যায়।
গোরক্ষনাথ মন্দির এবং পাথরের তৈরী গোরক্ষনাথ মন্দিরের কূপ রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে গোরকুই নামের একটি গ্রাম।
হরিণমারী শিব মন্দির বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে দশ কিলোমিটার দূরে উত্তর পশ্চিমদিকে হরিণমারী হাটের উপর শিবমন্দিরটি অবস্থিত।
গোবিন্দনগর মন্দির ঠাকুরগাঁও শহরে টাঙ্গন নদীর পশ্চিম তীরে কলেজপাড়ায় গোবিন্দনগর মন্দির অবস্থিত।
ঢোলরহাট মন্দির ঠাকুরগাঁও শহর থেকে নয় কিলোমিটার দূরে রুহিয়া যাওয়ার পথে ঢোলরহাট নামক জায়গায় পাকা রাস্তার পশ্চিমপাশে তিনটি মন্দির আছে। মন্দির তিনটির একটি শিব মন্দির, একটি দেবী মন্দির এবং একটি বিষহরি মন্দির নামে পরিচিত।
ভেমটিয়া শিবমন্দির পীরগঞ্জ পৌরসভা থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে ভেমটিয়া নামক জায়গায় শিব মন্দির আছে। মন্দিরটি প্রায় তিনশত বছর পূর্বের।
মালদুয়ার দুর্গ রানীশংকৈল উপজেলা হতে এক কিলোমিটার দক্ষিণে একটি প্রাচীন দুর্গের সন্ধান পাওয়া যায়। দুর্গটির আয়তন প্রায় ২.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এক কিলোমিটার প্রস্থ।
গড়গ্রাম দুর্গ রানীশংকৈল উপজেলার প্রায় তের মাইল উত্তরে নেকমরদ হাট ও মাজার। এখান থেকে প্রায় দু'কিলোমিটার উত্তরে গড়গ্রামে একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। দুর্গটির বাইরে পরিখা আছে।
বাংলা গড় রানীশংকৈল উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার উত্তরে এবং নেকমরদ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে কাতিহার- পীরগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় বাংলা গড় অবস্থিত। গড়ের ভিতর দিয়েই একটি পাকা রাস্তা পীরগঞ্জ রানীশংকৈলে চলে গেছে। গড়টির পশ্চিমদিকে এক বিশাল নদী প্রবাহিত ছিল যা এখন সম্পূর্ণ মৃত। মাটির প্রাচীর ও গভীর পরিখা দ্বারা গড়টি পরিবেষ্টিত। প্রবাদ আছে যে এখানে চাঁদ সদাগরের বাড়ি ছিল- বাসর রাতে লখিন্দরকে মনসাদেবীর কাল নাগিনী বাংলা গড়েই দংশন করেছিল।
গড় ভবানীপুর হরিপুর উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ভারতীয় সীমান্তের সন্নিকটে ভাতুরিয়া নামক গ্রামের কাছেই গড়ভবানীপুর।
গড়খাঁড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বেলতলা গ্রামে গড়খাঁড়ি নামক একটি দুর্গ পাওয়া যায়। দুর্গটি তীরনই নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ৬০০ × ৪০০ মিটার আয়তনের দুর্গটির মাটির প্রাচীরগুলো বর্তমানে প্রায় ২০ ফুট উঁচু।
কোরমখান গড় ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় এগার কিলোমিটার উত্তরে টাঙ্গন ব্যারেজ থেকে দু'কিলোমিটার পূর্বে কোরমখান গড়। গড়কে বলা হয়েছে 'কোরমখান গড়'। ফ্রান্সিস বুকানন এর নাম উল্লেখ করেছেন 'মোঘলিকোট' হিসেবে।
সাপটি বুরুজ ঠাকুরগাঁও উপজেলার ভুল্লীহাট থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে সাপটি বুরুজ অবস্থিত। বুরুজ মূলত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। মোঘল সাম্রাজ্য ও কুচবিহারের সীমান্ত এলাকা ছিল এ অঞ্চল।
দিঘি ঠাকুরগাঁও জেলার উল্লেখযোগ্য দিঘিগুলো হলো-গড়েয়াহাট দিঘি, লস্করা দিঘি, টুপুলী দিঘি, শাসলা ও পেয়ালা দিঘি, ঠাকুর দিঘি(দানারহাট), আঠারো গান্ডি পোখর-ঠাকুরগাঁও উপজেলায়। আধার দিঘি, হরিণমারী দিঘি, রতন দিঘি, দুওসুও দিঘি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। রামরাই দিঘি, খুনিয়া দিঘি, রানীসাগর-রানীশংকৈল উপজেলায়। মেদিনীসাগর দিঘি হরিপুর উপজেলায়। রানীশংকৈলের রামরাই দিঘি ঠাকুরগাঁও জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহৎ । দিঘিটি পাঁচশ থেকে হাজার বছরের পুরাতন হতে পারে। এর সঠিক ইতিহাস জানা যায় না।