সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। তাঁতশিল্প এ জেলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা সেতু) এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে। তা ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি, এনায়েতপূর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, মিল্কভিটা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তের ইকোপার্ক, বাঘাবাড়ি বার্জ মাউনন্টেড বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র, বাঘাবাড়ি নদী বন্দর ইত্যাদি বিখ্যাত স্থাপত্য ও শৈল্পকর্মের নিদর্শন এ জেলাকে সমৃদ্ধতর করেছে। বেলকুচি থানায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক একজন ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তার নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। তার নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি নদীভাঙ্গণে বিলীন হয়। পরবর্তীতে তিনি ভূতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি ভূতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
প্রশাসনিক বিভাগ | রাজশাহী |
আয়তন (বর্গ কিমি) | ২,৪৯৭ |
জনসংখ্যা | মোট: ২৭,০৭,০১১ পুরুষ: ৫১.১৪% মহিলা: ৪৮.৮৬% |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: | বিশ্ববিদ্যালয়: ০ কলেজ : ৯০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ২৪৮ মাদ্রাসা : ২৪৯ |
শিক্ষার হার | ৬৮.০ % সিরাজগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন |
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব | মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী |
প্রধান শস্য | ধান, পাট, গম |
রপ্তানী পণ্য | পাট ও পাটজাত দ্রব্য, গুড়, তাঁত বস্ত্র |
Sirajganj | |
---|---|
— District — | |
Location of Sirajganj in Bangladesh | |
Coordinates: 24.33°N 89.62°ECoordinates: 24.33°N 89.62°E | |
Country | Bangladesh |
Division | Rajshahi Division |
Area | |
• Total | 2,497.92 km2(964.45 sq mi) |
Population (1991) | |
• Total | 2,707,011 |
• Density | 1,100/km2 (2,800/sq mi) |
Literacy rate | |
• Total | 27% |
Time zone | BST (UTC+6) |
• Summer (DST) | BDST (UTC+7) |
Website | [1] |
[সম্পাদনা]অবস্থান
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৪২ কিমি। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২৪'২২ ও ২৪'৩৭ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯'৩৬ ও ৮৯'৪৭ দ্রাঘিমা এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের অবস্থান।
[সম্পাদনা]ভৌগোলিক সীমানা
সিরাজগঞ্জ জেলার উত্তরে বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলা, পূর্বে টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলা ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে নাটোর জেলা অবস্থিত।
[সম্পাদনা]প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
পাকিস্তান আমলের মহুকুমা সিরাজগঞ্জকে জেলায় উন্নীত করা হ্য় ১লা এপ্রিল, ১৯৮৪ সালে। সিরাজগঞ্জের জেলা ৯টি উপজেলায় বিভক্ত। এ গুলো হল বেলকুচি, কামারখন্দ, চৌহালি, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ সদর, তাড়াস, এবং উল্লাপাড়া।
[সম্পাদনা]সিরাজগঞ্জ শহর
সিরাজগঞ্জ শহর মধ্য বাংলাদেশে অবস্থিত একটি শহর। এটি ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম তীরে এবং ঢাকা শহর হতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। শহরটি সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান শহর। এখানে ১৫টি ওয়ার্ড এবং ৫২টি মহল্লা রয়েছে। ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ১২,৭১৪। সিরাজগঞ্জ শহরকে একসময় কলকাতা ও নারায়ণগঞ্জের সমতুল্য পাট ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হতো। বর্তমানে এটি পাট ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র। এখানকার পাটকলগুলো তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের প্রথম দিককার পাটকলের মধ্যে পড়ে।
[সম্পাদনা]ইতিহাস
বেলকুচি থানায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক একজন ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তার নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। তার নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি নদীভাঙ্গণে বিলীন হয়। পরবর্তীতে তিনি ভূতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি ভূতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন। সপ্তম শতাব্দীর পর থেকেই ময়মনসিংহের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল অর্থাত্ সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ফরিদপুর বছরের প্রায় আট থেকে নয় মাস পানির নিচে থাকত। ফলে জনবসতি ছিল কম। এ অঞ্চল থেকে পানি সাগরের দিকে নেমে গেলে বছরের চার-পাঁচ মাস সময়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে লোকজন আবাদ বসত চালু রাখার জন্য ভিড় জমাত। সেই শুকনো মৌসুমে কতিপয় মেহনতি মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে পরবর্তী বছরে প্লাবনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জাংগাল (বাঁধ) তৈরি করত। ফলে জাংগালের মধ্যকার জলাভূমি কিছুকালের মধ্যেই কায়েমি অঞ্চলের আকার ধারণ করত। ধারণা করা হয়, সমুদ্রতট থেকে সমতট শব্দটির উত্পত্তি।
[সম্পাদনা]অর্থনীতি
সিরাজগঞ্জ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট সমৃদ্ধ এবং সম্ভাবনাময়। এখানকার জনসাধারণের আয়ের প্রধান উত্সসমূহ হচ্ছে কৃষি, তাঁতশিল্প, বস্ত্রশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, মত্স্য চাষ, দুগ্ধশিল্প, মৃিশল্প, কুটির শিল্প ইত্যাদি। জনসাধারণের প্রায় সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া তাঁত-সমৃদ্ধ হওয়ায় জেলার প্রায় সকল উপজেলাতেই বিপুল পরিমাণে তাঁত বস্ত্র উত্পাদন হয়। এ সকল তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত সূতা ও বস্ত্র কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এ জেলায় বিরাট অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ দুগ্ধ ও দুগ্ধজাতপণ্য উত্পাদন কারখানা মিল্কভিটা এ জেলায় অবস্থিত। এ কারখানাকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু পালন করা হয়। যার সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা জড়িত। এ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর অবস্থিত। সেখানে ভাসমান বিদ্যুত্ কেন্দ্র, সিমেন্ট কারখানাসহ পেট্রোলিয়াম-জাতীয় পদার্থের ডিপো অবস্থিত। এসব স্থাপনায় ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজিত থেকে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। যমুনা নদী ও চলনবিল অধ্যুষিত এ জেলায় বিপুল সংখ্যক বড় বড় আকারের দীঘি ও পুকুর বিদ্যমান। ফলে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মত্স্য চাষ, আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
[সম্পাদনা]চিত্তাকর্ষক স্থান
সিরাজগঞ্জ জেলার চিত্তাকর্ষক স্থানসমূহ হচ্ছে—যমুনা সেতুর দুই পাড়, সায়েদাবাদ; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুটিবাড়ী, শাহজাদপুর; এনায়েতপুরী পীর সাহেবের মাজার এবং মসজিদ, চৌহালি; শিব মন্দির, তারাশ; নবরত্ন মন্দির, উল্লাপাড়া; ইলিওট ব্রিজ যা লোহার ব্রিজ বা বড় পুল নামে পরিচিত, সিরাজগঞ্জ সদর; সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সিরাজগঞ্জ সদর; কওমি জুটমিল গদক্যফদল্গ
[সম্পাদনা]বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
- সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী
- মাওলানা খোন্দকার আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ[১]
- সাবেক মন্ত্রী এম মনসুর আলী
- ড: আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন
- কবি মহাদেব সাহা
- ফজলে লোহানী
- সুচিত্রা সেন
- কবি ইজাব উদ্দিন আহমেদ