ফেনী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
ফেনী জেলা | |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
স্থানাঙ্ক | 23.0167° N 91.3917° E |
আয়তন | ৯২৮.৩৪ বর্গ কি: মি: বর্গ কিমি |
সময় স্থান | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
জনসংখ্যা (২০০১) - ঘণত্ব - শিক্ষার হার | ১২,০৫,৯৮০ - ১,২৮৮.৫৬/কিমি² - ৬৪% |
ওয়েবসাইট: ফেনী জেলা প্রশাসন | |
মানচিত্র সংযোগ: ফেনী জেলার প্রাতিষ্ঠানিক মানচিত্র |
[সম্পাদনা]ভৌগোলিক সীমানা
চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন ফেনী জেলার মোট আয়তন ৯২৮.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে কুমিল্লার লাংগলকোট উপজেলা, পশ্চিমে নোয়াখালীর সেনবাগ, পশ্চিম-দক্ষিণে নোয়াখালীর কোম্পানীগন্জ, পূর্ব-উত্তরে ভারতের মিজোরাম, পূর্ব-দক্ষিণে চট্রগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলা এবঙ দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর
[সম্পাদনা]প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
ফেনী জেলায় ৬ টি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হলো:
[সম্পাদনা]জেলার পৌরসভা সমূহঃ
ফেনী জেলায় ৫ টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলো হলো:
[সম্পাদনা]ইতিহাস
ফেনী নদীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে ফেনী।মধ্যযুগে কবি ও সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্যে একটা বিশেষ নদীর স্রোতধারা ও ফেরী পারা পারের ঘাট হিসেবে আমরা ফনী শব্দ পাই। ষোড়শ শতাব্দীতে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় লিখছেনঃ “ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার,পূর্বে মহাগিরি পার নাই তার।” সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত “বাহরিস্তান-ই-গায়েবীতে” ফনী শব্দ ফেনীতে পরিণত হয়।[৩] আঠার শতকের শেষভাগে কবি আলী রেজা প্রকাশ কানু ফকির তার পীরের বসতি হাজীগাওর অবস্থান সম্পর্কে লিখছেনঃ “ ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম, হাজীগাও করিছিল সেই দেশের নাম।”কবি মোহাম্মদ মুকিম তার পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেনঃ “ ফেনীর পশ্চিমভাগে জুগিদিয়া দেশে.........।“ বলাবাহুল্য, তারাও নদী অর্থে ফেনী ব্যবহার করেছেন। মনে হয় আদি শব্দ ‘ফনী’ মুসলমান কবি ও সাহিত্যিকদের ভাষায় ফেনীতে পরিণত হয়েছে।
১৮৭২-৭৪ সালের মধ্যে মোগল আমলের আমীরগাও থানা নদী ভাঙ্গনের মুখোমুখি হলে তা ফেনী নদীর ঘাটের অদূরে খাইয়অ্যা্রাতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ঐ থানাটি কোম্পানীর কাগজ পত্রে ফেনী থানা (ফেনী নদীর অদূরে বলে) নামে পরিচিত হয়।অতঃপর ১৮৭৬ সালে নতুন মহকুমার পত্তন হলে খাইয়অ্যা্রা থেকে থানা দপ্তরটি মহকুমা সদরে স্থানান্তরিত হয় ও নতুন মহকুমাটি ফেনী নামে পরিচিত হয়।[৪]
দূর অতীতে এ অঞ্চল ছিল সাগরের অংশ; তবে উত্তর পূর্ব দিক ছিল পাহাড়িয়া অঞ্চলের পাদদেশ।ফেনীর পূর্বদিকের রঘুনন্দন পাহাড় থেকে কাজির বাগের পোড়ামাটি অঞ্চলে হয়তঃ আদিকালে শিকারী মানুষের প্রথম পদচিহ্ন পড়েছিল।এখানকার ছাগলনাইয়া গ্রামে ১৯৬৩ সালে একটা পুকুর খননকালে নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের ব্যবহৃত একটা হাতিয়ার বা হাতকুড়াল পাওয়া গেছে।পন্ডিতদের মতে ঐ হাতকুড়াল প্রায় পাচ হাজার বছরের পুরাতন।[৫]
বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যে পূর্বদিকের ফেনী অঞ্চলকে ভূ-খন্ড হিসেবে অধিকতর প্রাচীন বলে পন্ডিতগণ মত প্রকাশ করেছেন। ফেনীর পূর্বভাগের ছাগল নাইয়া উপজেলার শিলুয়া গ্রামে রয়েছে এক প্রাচীন ঐতিহাসিক শিলামূর্তির ধ্বংসাবশেষ।প্রকাশ শিলামূর্তির অবস্থানের কারণে স্থানটি শিলুয়া বা শিল্লা নামে পরিচিত হয়েছে।প্রাচীন কালে হয়ত এখানে বৌদ্ধ ধর্ম ও কৃষ্টির বিকাশ ঘটেছিল।[৬]
ডঃ আহমদ শরীফ চট্টগ্রামের ইতিকথায় বলেছেনঃ প্রাচীনকালে আধুনিক ফেনী অঞ্চল ছাড়া নোয়াখালীর বেশির ভাগ ছিল নিম্ন জলা ভূমি। তখন ভুলুয়া (নোয়াখালীর আদি নাম) ও জুগিদিয়া (ফেনী নদীর সাগর সঙ্গমে অবস্থিত) ছিল দ্বীপের মতো। [৭] ছাগল নাইয়া নামকরণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে ইংরেজ আমলের শুরুতে সাগর (Sagor) শব্দটি ভুল ক্রমে সাগল (Sagol) নামে লিপিবদ্ধ হয়েছিল।তাই ছাগল নাইয়া শব্দটি প্রচলিত হয়ে ওঠে।উল্লেখ্য ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন পুথি পত্রে ছাগল নাইয়া নামের কোন স্থানের নাম পাওয়া যায় না।[৮]
ফেনী নদীর তীরে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বীর বাঙ্গালী শমসের গাজীর রাজধানী ছিল। তিনি এখান থেকে যুদ্ধাভিযানে গিয়ে রৌশনাবাদ ও ত্রিপুরা রাজ্য জয় করেন। তিনি চম্পক নগরের একাংশের নামকরণ করেছিলেন জগন্নাথ সোনাপুর। [৯]
সংক্ষেপে, ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে যে সকল মহকুমাকে মানোন্নীত করে জেলায় রূপান্তর করা হয়েছিল ফেনী জেলা তার একটি। জেলাটির আয়তন ৯২৮.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালের পূর্বে এটি নোয়াখালী জেলার একটি মহকুমা ছিল। এ মহকুমার গোড়াপত্তন হয় ১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দে মিরসরাই, ছাগলনাইয়া ও আমীরগাঁও এর সমন্বয়ে। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন কবি নবীন চন্দ্র সেন। ১৭৭৬ সালে মিরসরাইকে কর্তন করে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভক্ত করা হয়। প্রথম মহকুমা সদর দপ্তর ছিল আমীরগাঁওয়ে। ১৮৮১ সালে তা ফেনী শহরে স্থানান্তরিত হয়[১০]।
[সম্পাদনা]ফেনী জেলার কৃতি সন্তান
[সম্পাদনা]শহীদ বুদ্ধিজীবিঃ[সম্পাদনা]কবি,সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদঃ
[সম্পাদনা]আইন-বিচার, সশস্ত্র ও প্রশাসনিক কর্মকতাঃ
| [সম্পাদনা]সাংবাদিক, সম্পাদক ও কলামিস্টঃ
[[১৫]]
[সম্পাদনা]রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বঃ
[[১৬]]
| [সম্পাদনা]শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বঃ
[সম্পাদনা]তরুণ ব্যক্তিত্বঃ
|
[সম্পাদনা]জেলার ঐতিহ্য
১) জগন্নাথ কালী মন্দিরঃ ছাগলনাইয়া উপজেলায় অবস্থিত। শসসের গাজী তার বাল্যকালে লালন কর্তা জগন্নাথ সেনের স্মৃতিতে এ মন্দির ও কালী মূর্তি নির্মাণ করেন।
২) চাঁদ খাঁ মসজিদঃ মোগল আমলের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন চাঁদ গাজী ভূঞা। তার নামানুসারে ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের অদূরে চাঁদগাজী বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদগাজী বাজারের কাছে মাটিয়া গোধা গ্রামে অতীত ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে অবস্থান করছে চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ। মধ্যযুগের রীতি অনুযায়ী চুন, সুড়কী ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট দ্বারা তৈরী এ মসজিদের দেয়ালগুলো বেশ চওড়া। মসজিদের ছাদের উপর রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ । মসজিদের সামনে একটি কালো পাথরের নামফলকে এ মসজিদের নির্মানকাল ১১১২ হিজরী সনউল্লিখিত আছে।
৩) চারশত বছরের প্রাচীন কড়ই গাছ: তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক কবি নবীন চন্দ্র সেন এই গাছের ছায়ায় বসে কবিতা লিখতেন ।
৪)ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়: ১৮৮৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।
৫)গান্ধী আশ্রমঃ নতুন মুন্সিরহাট বাজারে অবস্থিত গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট এর একটি টিন সেড ঘর আছে । ঘরের ভিতর প্রশিক্ষনের সরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে । গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্টের বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় ,মহাত্মা গান্ধী তাঁর জীবদ্দশায় ১৯২১ সালের ৩১ আগষ্ট ফেনীতে আগমন করেন এবং রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে সভা করেন । ঐদিন ফুলগাজী উপজেলার নতুন মুন্সিরহাট (সাবেক বীরেন্দ্রগঞ্জ বাজার) এর খাদি প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেন । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি সশরীরে বর্তমান আশ্রমের স্থানে ছিলেন ।
৬) শমসের গাজীর দীঘিঃ শমসের গাজী তার মাতা কৈয়ারা বেগমের নামে এ দীঘি খনন করেন। এ দীঘি ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের নিকটবর্তী কোনাপুর গ্রামে অবস্থিত। ৪.৩৬ একর আয়তনের এ দীঘির ১/৩ ভাগ ভারতীয় অংশে পড়েছে। ফেনী সদর হতে ছাগলনাইয়ার দূরত্ব ১৮ কি.মি.।[১৭]
[সম্পাদনা]অর্থনীতি
ফেনী জেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। জেলার মধ্যদিয়ে কয়েকটি নদী প্রবাহিত হওয়ার ফলে এর কৃষি জমি সমূহ বেশ উর্বর। এছাড়া এ অঞ্চলের অনেক লোক বিদেশ থাকার ফলে প্রচুর পরিমাণ বৈদিশিক আয় এ জেলার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
[সম্পাদনা]চিত্তাকর্ষক স্থান
রাজারজি দীঘি, মুহুরি প্রজেক্ট, স্লুইস গেইট,বিজয়সিং দীঘি।
[সম্পাদনা]খেলাধুলা
- ফেনী সকার ক্লাবঃ- বাংলাদেশ ফুটবল প্রিমিয়ার লীগ ও বি-লীগে ঢাকার বাহিরের জেলার একমাত্র দল।
- ফেনী প্রগ্রেসিভ লিংক (এফপিএল) অথরিটিঃ-ফেনীর ক্রিকেট খেলার মান উন্নায়নের জন্য কাজ করছে এই সংগঠন। এই সংগঠনটি ফেনী বাসীদের কয়েকটি সফল টুর্নামেন্ট উপহার দিয়েছে । জেলা পর্যায়ে বেসরকারীভাবে স্কুল ক্রিকেট সারা বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত এফপিএল স্কুল ক্রিকেট ২০১১ অনুষ্ঠিত হয়েছে। [[১৯]]
ফেনী জেলার খেলাধুলায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখছে এলাকার বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন।
[সম্পাদনা]ফেনী জেলার প্রকাশিত সংবাদপত্র
অনলাইন সংবাদপত্র সমূহঃ
ফেনী জেলা থেকে প্রায় ৩৪টির মতো অন্যান্য সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
[১৮]
[১৮]